খুলনার দিঘলিয়ায় মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরম কাল আসার সাথে সাথে ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে মশার বিস্তার। দিন রাতে সব সময় মশার কামড়ে নাজেহাল দিঘলিয়াবাসী। দিনের বেলায়ও অফিস কিংবা বাসা বাড়িতে মশার কয়েল জ¦ালিয়ে রাখতে হচ্ছে। বাড়ির আঙ্গিনায় নিরবে এক মুহূর্ত দাঁড়াবার উপায় নেই। আর একটু সন্ধ্যা হলেই মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও কয়েক গুন। কিন্তু মশা নিধনের জন্য প্রতি বছর বাজেট থাকলেও কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথেই মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কয়েল, স্প্রে বা মশারি টাঙ্গিয়েও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি দিনের বেলায়ও এক দন্ড বসার কায়দা নেই মশারী বা মশার কয়েল ছাড়া। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। কেউই স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। দিঘলিয়া উপজেলাটি এক সময়ের শিল্পাঞ্চল নামে খ্যাত হলেও এখন আর তেমন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। তবে গ্রামাঞ্চলে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত ঢাকনাবিহীন ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা। এ সকল ড্রেন বর্তমানে হয়েছে বিভিন্ন এলাকার মানুষের পয়ঃনিস্কাশন ও বর্জ্য নিষ্কাশনের মাধ্যম। ফলে এ গ্রামাঞ্চলের হওয়ায় মিল ও কলকারখানার দূষিত বর্জ্য, বিভিন্ন স্থানের জমে থাকা নোংরা পানি এবং যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলায় এ অঞ্চলটি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। দিঘলিয়া উপজেলা বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন স্থানে শহরের ন্যায় বসানো নেই ডাস্টবিন ও আবর্জনা ফেলার স্থান। নেই ময়লা ফেলার খোলা উদ্যান। যে কারণে বিভিন্ন গ্রামের লোকজন যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কেউ কেউ ড্রেনে ফেলে ড্রেনে পানির ¯্রােত বন্ধ হয়ে যায়। ড্রেনের মাঝে পানি আটকে করে পানি দূষণ। পঁচা ও নোংরা ড্রেন এলাকার মানুষের মাঝে করে বায়ু দূষণ। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার বিস্তার ক্রমশ বাড়ছেই। আর এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। তাছাড়া মশার উৎপাতে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়াশুনাও চরম ব্যাঘাত ঘটছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, সারাদিন মশার উপদ্রব থাকলেও সন্ধ্যার পরপরই এই উৎপাত আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে সন্ধ্যায় মশার কয়েল জ¦ালিয়ে বা স্প্রে ছিটিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়তে বসতে হচ্ছে। এমনকি মশার উৎপাতে নাজেহাল হয়ে মশারি টাঙ্গিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করতে হচ্ছে। অনেকই মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পরিবেশবাদী সংগঠন আলোর মিছিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ তারেক বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। দিঘলিয়া উপজেলা ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত মশার বংশ বৃদ্ধি ঘটছে। দ্রুত মশার বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মশা বংশবিস্তার ঘটায়। এ সময় মশার কামড় জনিত রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। মশার কামড়ে মানুষ অ্যানোফিলিস, ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এজন্য সকলকে সচেতন থাকা প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমার জানামতে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন মশার বংশ নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় খেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, ডেঙ্গুসহ সকল মশার বংশ বিস্তার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নগুলো যা করেছে তা যথারীতি হয়নি। আগামী মাসিক সভায় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক করণীয় জানিয়ে দেওয়া হবে। এবং বাস্তবায়ন হলো কিনা তা তদারকি করা হবে।