বাংলাদেশের বর্তমান আইনে পাবলিক প্লেস কিংবা গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ। ধূমপান বিষপান একথা আমাদের সবারই জানা। এ কথা জেনেও ধূমপানের ব্যবহার যেন দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বালক থেকে শুরু করে বার্ধক্যে কাবু হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরাও এই মহামারিতে আক্রান্ত। সম্প্রতি নারীদের মাঝেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে ধূমপানের প্রবণতা। বিশেষত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীদের কাছে ধূমপান যেন স্বাধীনতার স্বরূপ। আজকাল টি-স্টলগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের হাতেও দেখা যায় জ্বলন্ত সিগারেট। যদিও পাবলিক প্লেস কিংবা গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইন অনেকেই মানে না। এই বিধান অমান্য করলে তিন শ’ টাকা অর্থদণ্ড এবং একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এই অপরাধ করলে দ্বিগুণ হারে দণ্ডিত হওয়ার কথা। কাগজের সেই কথা বাস্তবে খুব বেশি চোখেও পড়ে না। এই বিধান অমান্যের সাজা ৩০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়। নতুন আইনে এই বিধান কতটা বাস্তবায়ন হবে সেটিই এখন দেখার বিষয়। বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় সকল পাবলিক প্লেস শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার সুযোগ না থাকায় পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। নারী-শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরা পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিশ্বে বছরে ১২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয় এবং ধূমপানের শিকার হচ্ছে ৪৩% মানুষ। এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্ক জনগণের প্রায় ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ রেস্তোরাঁয় এবং ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ চা-কফির স্টলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রায় ২৪ শতাংশ (২ কোটি ৫০ লাখ) প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। এছাড়াও প্রায় ৩৯ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ (৪ কোটি ৮ লাখ) বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে দেশকে তামাকমুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। দেশকে তামাকমুক্ত করার যে লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে যাচ্ছে, তার বাস্তবায়নে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিদ্যমান আইনটির কঠোর প্রয়োগ। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতকে আরো বেশি কার্যকর করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে ডিজিটালাইজড মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে। কেউ প্রকাশ্যে ধূমপান করলে যাতে দ্রুত অভিযোগ করা যায়, সেজন্যে একটি নাম্বার খুলে দিতে হবে। নিয়মিত জরিমানা করা হলে এবং শাস্তির আওতায় আনা গেলে খুব দ্রুতই এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। ধুমপানমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে।