মৃতপ্রায় শিবসা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ (জোয়ার-ভাটা) নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে এক সময়ের খর¯্রােতা শিবসা নদী এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। যে কারণে শিবসা পাড়ের মানুষ জীবিকা হারাচ্ছে। শিবসার পানিতে প্লাবিত হয়ে পাইকগাছা পৌর শহরসহ আশাপাশের এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। তাই শিবসা নদী খননে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। শুক্রবার সকালে খুলনা জেলার পাইকগাছায় শিবসা নদীর পাড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘ওয়াটারকিপার্স-বাংলাদেশ’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন পাইকগাছা পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর। বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল, পাইকগাছা পৌরসভার প্যানেল মেয়র শেখ মাহবুবুর রহমান রঞ্জু ও কবিতা রানী দাশ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট প্রশান্ত মন্ডল, অধ্যক্ষ হরেকৃষ্ণ দাশ, সচেতন সংস্থার সভাপতি বিদ্যুৎ বিশ্বাস ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আলাউদ্দিন মোড়ল প্রমূখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাইকগাছা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত শিবসা নদী ও কপোতাক্ষ নদে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ ভেঙে ও উপচে জেলে পল্লীর ঘর বাড়ি সম্পূর্ণ নদীর পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বাঁধ উপচে পাইকগাছা পৌর বাজারের কাঁকড়া মার্কেট, চিংড়ি বিপণন মার্কেট, মাছ বাজার, ফল বাজার ও সবজি বাজারে পানি উঠে যাচ্ছে। এ ছাড়া হরিঢালী ইউনিয়নের মাহমুদকাটী, সোনাতনকাটী ও হরিদাসকাটী, রাড়-লী ইউনিয়নের রাড়-লীর জেলে পল্লী, লস্কর ইউনিয়নের আলমতলাসহ বিভিন্ন এলাকার ওয়াপদার বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নাব্যতা হারিয়ে খুলনার পাইকগাছা অঞ্চলে শিবসা নদী ভরাট হয়ে এখন নালায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, উপজলার পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্র অবস্থিত এক সময়ের খর¯্রােতা শিবসা নদীতে লঞ্চ, স্টিমারসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করতো। কয়রা, পাইকগাছা ও বড়দল এলাকার লোকজন নৌপথেই সহজেই যাতায়ত করতো। এখন সব কিছুই শুধু স্মৃতি। অথচ সেই নদী এখন সম্পূর্ণ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। জেগে উঠছে বিশাল চর। ফলে বর্ষা মৌসুম এলেই জোয়ারের পানিতে পাইকগাছা বাজার প্লাবিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাজারের ব্যবসায়ীরা। নদী খনন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার কোন সমাধান নেই। কারণ এখন নামমাত্র নদী আছে, বাস্তব নদী অস্থিত্ব হারিয়েছে। তাই পাইকগাছাবাসীর একটাই দাবি শিবসা নদী খনন। দ্রুত এ নদী খনন না হলে অচিরেই এই এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হবে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় নদ-নদী দখল-দূষণ ও ভরাটের কারণে ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মানুষের বাস্তচ্যুতির সংখ্যা বাড়ছে। এই সংকট থেকে উত্তোরণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল জনশূণ্য হয়ে পড়বে। তাই এই সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।