বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় কয়েক দিন টানা বৃষ্টিতে বেশির ভাগ মরিচগাছ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এদিকে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসায় নাগর নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে গুলিয়া স্কুল সংলগ্ন বাঁধ ধসের আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। বৃষ্টির পানিতে ডুবে মারা গেছে প্রায় ৭০০ মুরগি, পুকুর ডুবে ভেসে গেছে মাছ।
জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলায় টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে পানি আসায় নাদর নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনদিন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গুলিয়া স্কুল সংলগ্ন নাগর নদীর বাঁধ ধসের আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। এতে করে কৃষকদের দিন কাটছে হতাশায়। শুধু তাই নয়, কৃষকরাও বুক ভরা আশা, চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে শক্ত হাতে নেমেছিলেন মাঠে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে ধানের পাশাপাশি মরিচ চাষ করেছেন কৃষকরা। মরিচ ক্ষেতে পানি জমে থাকায় দু:চিন্তার পড়েছেন চাষীরা। মরিচ গাছ রক্ষায় শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচ দিলেও একটু পড়েই আবার পানিতে ডুবে যাচ্ছে।
এদিকে উপজেলার কল্যাণনগর গ্রামে পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল চারটি শেটে সোনালি সাড়ে ৪ হাজার ও ব্রয়লার এক হাজার ২০০ মুরগির খামার দেয়। বৃহস্পতিবার রাতের ভারী বৃষ্টির পানিতে ডুবে তার খামারের সোনালি জাতের ৫০০ ও ব্রয়লার ২০০ মুরগি মারা গেছে। অন্য মুরগি বেঁচে থাকলেও অবস্থা ভাল নয়। সেখানে তার পুকুর ডুবেও প্রায় ৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এতে তার প্রায় ৯ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ খামারি সাবেক মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল জানান। তার মতো উপজেলার অনেক পুকুর ডুবে মাছ ভেছে গেছে।
এছাড়া উপজেলা ও পৌরসভায় বৃষ্টির পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাসা-বাড়ির সামনে হাঁটু পানি। কিছু কিছু বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। আর এই ভারী বৃষ্টিতে ভেঙ্গে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
মরিচ চাষিরা জানান, কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় বেশির ভাগ মরিচের খেতে পানি জমে যায়। সেই মরিচের জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দেয়া হয়। তারপরেও বৃষ্টির পানি ও আশপাশের জমির পানি চুয়ে আসছে। এতে অনেক খেতের মরিচগাছ মরে যাচ্ছে। কিছু জমির মরিচগাছ বেঁচে থাকলেও সেগুলোতে মরিচ নেই বললেই চলে। আবার কিছু খেতের গাছ বেঁচে গেলেও সেগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর ফলে এ উপজেলায় কাঁচা মরিচের ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার ভাটগ্রামের মরিচ চাষী আক্কাছ আলী বলেন, ‘হাটে মরিচের দাম বেশি। কিন্তু বিষ্টিতে মরিচগাছের সব্বনাশ হয়া গ্যাছে।’ জমিতে গাছ থাকলিউ তাতে মরিচ নাই।’ তিনি এবার ৩ বিঘা জমিতে মরিচ আবাদ করেছিলেন। তাঁর মরিচ গাছ লাগানো থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা খরচ হয়। বাজারে দাম বেশি হলেও জমিতে মরিচ গাছ নষ্ট হওয়ায় হাসি নেই তার মতো অনেক মরিচ চাষির।
এ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: গাজিউল হক বলেন, ‘এবার উপজেলায় ৩১০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। বৃষ্টিতে মরিচের খেত নিমজ্জিত হয়েছে। তবে সঙ্গে সঙ্গে মরিচ চাষিরা শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দেয়ায় মরিচগাছ পুরোপুরি নষ্ট হয়নি।
জানতে চাইলে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাইবো) কার্যসহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুদ রানা বলেন, নাগর নদীর প্রতিদিন পানি বাড়ছে। যে কারণে নাগর নদীর বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অফিসে কথা বলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত করা হবে।