রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ মজুত থাকলেও দ্বিগুন দামের আশায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের এক শ্রেনির অসাধুরা হিমাগার থেকে চাহিদামতো আলু বাজারে ছাড়ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে দ্রব্যমূল্যের অস্থির বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। আর এর জন্য স্থানীয় বাজারগুলোতে মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা আলু বেশি দরে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
এ বিষয়ে রোববার (৮ অক্টোবর) রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডাবল দামের আশায় হিমাগার থেকে চাহিদামতো আলু বাজারে ছাড়ছে না ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ফলে আলু উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা রাজশাহীতে খুচরা বাজারে ক্রেতাদের আলুূ কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। হিমাগার ফটক থেকে আড়ত ও পাইকারের মোকাম ঘুরে খুচরা বাজারে পৌঁছতেই কেজিতে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে আলুর দাম। তবে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে হিমাগার ছাড়াও পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযানও চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কিন্তু সরকারের এই সংস্থার জনবল সংকটের কারণে তাদের পরিচালিত অভিযান যথেষ্ট নয় বলেও এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী কার্যালয়ের তথ্য মতে, রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া বাজারের দুটি আড়ত ও দুুটি হিমাগারে পৃথক টিম অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় হিমাগারের আলু ছাড়ের মূল্য চালানি রসিদ না থাকায় বায়া বাজারের আড়তদার মুকুল হোসেনকে ৫ হাজার টাকা ও হযরত আলীকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হিমাগার মালিকদের দ্রুত সময়ে বাজারে আলু ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপণ্ডপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, প্রথমে আমরা খুচরা আলু বিক্রেতাদের কাছে ক্রয় রসিদ দেখতে চাইলে তারা দেখাতে পারেনি। পরে আমরা আড়তে গিয়ে আলু ছাড়ের রশিদ দেখতে চাইলে তারাও দেখাতে পারেনি। আড়তদাররা ভোক্তা অধিকার টিমকে জানান, হিমাগার থেকে তাদের আলু ছাড়ের রশিদ দেওয়া হয় না। জাতীয় ভোক্তা কর্মকর্তা আরও বলেন, নওহাটার ‘হিমালয়’ কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ ক্ষমতা ১ লাখ ১০ হাজার বস্তাা। ইতোমধ্যে তারা ৬০ হাজার বস্তা আলু ছেড়েছে। বাকি ৫০ হাজার বস্তা মজুত রয়েছে। অন্যদিকে, রহমান কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ ক্ষমতা ৩ লাখ বস্তা। তারা ১ লাখ ৭৯ হাজার বস্তাা আলু ছেড়েছে। এই কোল্ড স্টোরেজে এখনো ১ লাখ ৩১ হাজার বস্তা আলু মজুত আছে।
এ ঘটনায় হিমাগার মালিকরা ভোক্তা অধিকার টিমকে জানিয়েছেন, আলু হিমাগারে থাকলেও এর মালিক বিভিন্ন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যারা লাভের আশায় আলু কিনে মজুত করে রেখেছে। আর এই কথার প্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার টিম তাদের তালিকা চেয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা জানান, দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী জেলা রাজশাহী। এক মৌসুমে শুধু রাজশাহীতে প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩৬টি হিমাগারের সংরক্ষণ ক্ষমতা ৮০ লাখ বস্তা, যার পরিমাণ ৮ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে ৪ লাখ টনের বেশি আলু মজুত আছে। যদিও এর একটা অংশ বীজ আলু হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে যা আবাদ মৌসুমে হিমাগার থেকে ছাড়া হবে। হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ মজুত থাকতে স্থানীয় বাজারে আলুর কেজি ৫০ টাকা হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন তারা।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা গেছে, সবশেষ আলু সংগ্রহ মৌসুমে বড় বড় কয়েকটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মাঠ থেকে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজিদরে আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করে। হিমাগারে ৫৫ কেজি থেকে ৬০ কেজির এক বস্তাা আলু সংরক্ষণে এক মৌসুুমের ভাড়া লাগে ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা। সেই হিসাবে এক কেজি আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়া লাগে ২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে শতকরা ১০ ভাগ মুনাফা যোগ ও পরিবহণ ভাড়াসহ হাতবদল হয়েও আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার বেশি হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু আলুর কেজি ৫০ টাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে মনে করেন ক্রেতারা।
দাম বেশির কারণ হিসেবে রোববার (৮ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর লক্ষীপুর এলাকার এক দোকানি বলেন, আজকের পাইকারি বাজার থেকে ৪৬-৪৭ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছি। আর এই টাকার সঙ্গে যুক্ত হবে পরিবহন খরচ। সেক্ষেত্রে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা ছাড়াও আমাদের কোন উপায় আছে কী?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হিমাগার মালিক বলেন, হিমাগার থেকে বর্তমানে অল্প অল্প করে আলুু বাজারে ছাড়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বাজারে আলুর দামের খোঁজখবর রাখছেন। অনেকেই আলু উত্তোলন করে দেশের বিভিন্নœ জেলায় চালান করছেন।
রাজশাহী জেলার মোহনপুরের আলুচাষি মুরসালিন বলেন, হিমাগার থেকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আলুু ছাড়ছে না আরও বেশি দামের আশায়। একইভাবে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও আলু কিনে আড়তে মজুত রাখছেন। এতে করে ভোক্তার ওপর দামের বোঝা দিন দিন বাড়ছে।