মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছয় জনের সবাই সেনা সদর দপ্তরে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত মফিজুল ইসলামের স্বজন। নিজে কোনো রকমে বেঁচে ফিরতে পারলেও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিখোঁজ হয়। মর্মান্তিক এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মফিজুল বলেন, ‘ট্রলারটি যখন ডুবে যাচ্ছিল, বেশ কয়েক বার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলাম, কেউ এগিয়ে এলো না। ঘাটে কয়েকটি ট্রলার এবং লোকজন ছিল কেউ আসেনি।’
নিখোঁজরা হলো, মফিজুল ইসলামের স্ত্রী সুমনা আক্তার (২৮), দুই মেয়ে সাফা (৬), মাওয়া (৪), ভাতিজি মারওয়া (৮), ভায়রা ভাই সাব্বির হোসেন (৪০) ও তার ছেলে ইমাদ হোসেন (২)।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে মফিজুলের গ্রামের বাড়ি গজারিয়ার দক্ষিণ ফুলদী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কয়েক শ মানুষের জটলা। শোকে বিহ্বল গোটা পরিবার, চলছে স্বজনদের আহাজারি। পাশের একটি রুমে দরজা বন্ধ করে কয়েকজন ঘিরে রেখেছেন মফিজুলকে। সঙ্গে থাকা একজন জানান, ঘটনার পর থেকে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলতে পারছে না মফিজুল। স্ত্রী এবং দুই কন্যা নিখোঁজের খবরে শোকে স্তব্ধ তিনি।
মফিজুল জানান, বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসার পরে শুক্রবার দৌলতপুর গ্রামের একটি বাড়িতে বেড়াতে যান তারা। এ সময় তার সঙ্গে নিজের পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য স্বজনসহ ১১ জন ছিলেন। দাওয়াত খেয়ে বিকেলের দিকে তারা ট্রলারে করে মেঘনা নদীতে ঘোরার উদ্দেশ্যে বের হন। চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় ঘোরাঘুরি শেষ করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গজারিয়া ফিরে আসছিলেন। ব্যস্ততম এই নদীতে অসংখ্য বাল্কহেড চলাচল করায় প্রথমেই ট্রলার চালক রফিক মিয়াকে সতর্ক করেছিলেন তিনি। ট্রলারটি যখন চর কিশোরগঞ্জ থেকে গজারিয়া লঞ্চঘাটে আসছিল তখন নারায়ণগঞ্জগামী একটি বাল্কহেড সেটিকে ধাক্কা দেয়। বাল্কহেডটি বালু ভর্তি থাকার কারণে বেশিরভাগ অংশ পানির নিচে ডুবে ছিল, আর ওপরে তেমন কোনো আলো না থাকায় ট্রলারচালক সেটা খেয়াল করতে পারেননি। ধাক্কা দেয়ার পূর্ব মুহূর্তে ট্রলারচালক বাল্কহেডটি দেখে ট্রলারটি সরানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারটির ডুবে যেতে থাকে। এ সময় তার এক মেয়ে তার কাছাকাছি ছিল আরেক মেয়ে কিছুটা দূরে ছিল। তিনি তার স্ত্রী সুমনাকে উঠে দাঁড়াতে বলেন। পরক্ষণে যখন তিনি বুঝতে পারেন ট্রলারটি ডুবে যাচ্ছে তখন বেশ কয়েক বার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করেন ঘটনাস্থলের অদূরে চরকিশোরগঞ্জ ঘাট এলাকায় বেশ কয়েকটি ট্রলার এবং কয়েকজন লোক থাকলেও সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। ট্রলার উল্টে পানিতে পড়ে গেলে পানির বেশ গভীরে চলে যান তিনি, তবে সাঁতার জানায় প্রাণে বেঁচে যান। অনেকক্ষণ সাঁতার কাঁটার পরে অন্য একটি ট্রলার তাকে উদ্ধার করে। তারপর কিছুই মনে নাই তার। কিছুক্ষণ পরে তিনি দেখলেন তিনি মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে।
গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ইজাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকেই উদ্ধার অভিযান শুরু করি আমরা। এ সময় সুমনা আক্তার নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বাকি যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের সন্ধানে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় চালকসহ ১২ জন আরোহী নিয়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। এই ঘটনায় ছয় জন জীবিত উদ্ধার হলেও মা ও দুই মেয়েসহ নিখোঁজ ছিলেন ছয় জন। উদ্ধার দুজনের লাশ শনিবার মফিজুলের স্ত্রী সুমনার মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং ভগ্নিপতির লাশ উদ্ধার করা হয় এখনো নিখোঁজ তিন জনের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে।