রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা একজন গুণী অধ্যক্ষ মো. গিয়াজ উদ্দিন। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে স্থানীয় সাংগঠানিক কমিটি কতৃক নিয়োগ পেয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯৪ সালের ৫ এপ্রিল সরকারি বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তার হাত ধরে কলেজটি উচ্চ মাধ্যমিক,ডিগ্রি পাশ ও অনার্স কোর্সের স্বীকৃতি লাভ করে। কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। শুরু থেকে সকল শিক্ষক কর্মচারী তার মাধ্যমেই নিয়োগ সম্পন্ন হয়। সমতল ভূমিতে জায়গা না পাওয়ায় কলেজটি ভেঙ্গে যাওয়ার হুমকিতে পড়ে। একপর্যায়ে তার পরিকল্পনায় একটা ডোবা বিলের মধ্যে কলেজটি গড়ে উঠে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কারও তিনশতক, কারও চারশতক এইভাবে ৪২টি দলিলে অখন্ড ১২ বিঘা জমির উপর সবুজ চত্বরবিশিষ্ট কলেজটি গড়ে উঠে। একটু একটু করে টাকা সংগ্রহের মাধ্যমে জমি ক্রয় এবং সেগুলো ভরাট করে অনেক পরিশ্রমের ফসল কলেজটি। একজন জমির মালিকের কাছে কতবার ধর্না দিতে হয়েছে তার হিসেব নেই। একান্ত সাক্ষাৎকারে কেশরহাট ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন আফসোস করে বলেন,"আমি অধ্যক্ষ গিরি"কবে করলাম লেবারি করেইতো পার হলো। শিক্ষক,কর্মচারী নিয়োগে ডোনেশন নেওয়ার সরকারি নিয়ম না থাকলেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অনুদানই গড়ে উঠে। কেশরহাট ডিগ্রী কলেজটি শিক্ষক,কর্মচারীদের অনুদানের অর্থেই গড়ে উঠে। তবে সেই সময় এই ব্যাপক অনুদানের নিয়ম ছিল না। কলেজের জমি ক্রয় অবকাঠামো, আসবাসপত্রসহ বিবিধ উপকরনের ৮০% ভাগই নিজস্ব অর্থায়নে তৈরী। অধ্যক্ষ মোঃ গিয়াস উদ্দিন কলেজের দায়িত্ব পালন ছাড়াও একজন সামাজিক সচেতন ব্যক্তি। তিনি এলটাস বাংলাদেশ নামে একটা ধুমপান ও মাদক বিরোধী সংগঠন তৈরী করে এই কমিটির মাধ্যমে এলাকায় ব্যাপকভাবে ধুমপান ও মাদক বিরোধী প্রচার চালান। তিনি দূর্নীতির বিরুদ্ধেও সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। তিনি একজন লেখক ও কলামিস্ট। তার প্রকাশিত গ্রন্থ “কথা নয় কাজ”, “রাগ-অনুরাগ” ও “আল কুরানের গল্প ” এ অঞ্চলে পাঠক সমাজে যথেষ্ঠ জনপ্রিয়তা লাভ করে। শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি ২০০৯ সালে “বীর শ্রেষ্ট রাহুল আমিন স্বর্ণপদক ও সম্মাননা সনদ, ২০১৭ সালে “মহাত্মা গান্ধী স্বর্ণপদক” ২০১৯ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ডসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায় বা সংস্থা হতে পদক ও সম্মাননা স্বারক লাভ করেন। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে উপজেলা পর্যায়ে ৫ বার শ্রেষ্ট অধ্যক্ষ হিসেবে সনদ লাভ করেন। তিনি একজন রাজনৈতিক সচেতন মানুষ। ব্যাক্তি বা দল পরিবর্তন নয় পদ্ধতি পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি সৎ নেতৃত্ব তৈরীর ফরমূলা নিয়ে জনসচেনতা তৈরীর জন্য বর্তমানে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। তার অফিসে মাথার উপর দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কবিতা ঝুলিয়ে রেখেছেন। তার লেখা ও কর্মে সর্বত্রই দূর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান। দূর্নীতির বিরুদ্ধে যার কন্ঠ সোচ্চার তারই ঘাড়ে পা রেখে কেউ দূর্নীতির মহোৎসব করবে এটা তিনি সহ্য করেননি। গত ২০১৯ সালের ১৩ মে থেকে মোহনপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো.আয়েন উদ্দিনের আপন ভগ্নীপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুস সালামন কেশরহাট ডিগ্রী কলেজে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর এই কলেজের মালিক বনে যান। এরপর ষোল আনা নিয়োগ বাণিজ্যে লিপ্ত হন। এমনকি ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তিনি শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন বিলে স্বাক্ষর বন্ধ রেখে প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করেন। এ সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় অধ্যক্ষ সভাপতির রোসানলে পড়েন। সভাপতির অপকর্মে মুগ্ধ হয়ে তারই মনোনিত গর্ভানিং বডির সদস্যরা পদত্যাগ করেন। শিক্ষক-কর্মচারি, এলাকাবাসী এবং কলেজের সুভাকাঙ্খীরা না চাইলেও তিনি উচ্চ মহলে তদবিরের মাধ্যমে বারবার সভাপতির পদে নিবাচিত হন। বর্তমানে তিনি ৪র্থ মেয়াদে সভাপতি। ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী সভাপতি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ তুলে তাকে সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করেন। বিধিতে স্পষ্টতই বলা আছে “কোন ফৌজদারি/নৈতিক স্খলন/দূর্নীতির মামলায় কোন শিক্ষক আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হলে নিয়োগকারি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মচারিকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে। অথচ এ সবের কোন কারনই ঘটেনি। সাময়িক বরখাস্তপত্রে তিনি কোন কারণ উল্লেখ করতে পারেন নি। শোকজে ৭ দিনের সময় দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি ৩ দিনের সময় দিয়েছেন। তারপরও ৩ দিনের মধ্যেই জবাব দেওয়া হলেও তা পৌছানোর যৌক্তিক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সাময়িক বরখাস্থপত্র পাঠিয়ে দেন। গভর্ণিং বডির সভার সিদ্ধান্তের নিয়ম থাকলে ও তিনি একক সিদ্ধান্তে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই কাজটি করেন। তিনি ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার অসৎ উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরীর অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। তিনি কলেজের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে নিজের স্বার্থ রক্ষায় অনেক বেশি সচেষ্ট। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন নাই। ৬০দিন অতিবাহিত হবার পর পুর্ণাঙ্গ স্পষ্ট বিধান থাকলেও সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাদের পদের অপব্যবহার করে তারা বেতন বন্ধ রেখেছেন। প্রায় সমস্ত শিক্ষক কর্মচারী অধ্যক্ষের সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহারের আবেদন করলেও তিনি তা আমলে নেন নি। ৩০বছর ধরে নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানের কর্মস্থলে শিক্ষক কর্মচারী ও এলাকাবাসী অধ্যক্ষের প্রত্যাবর্তনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ৩০ বছর ধরে শিক্ষক কর্মচারী ও এলাবাসীর শ্রম, ঘাম আর ভালোবাসার মিশ্রিত ফসল এই কলেজের একক ক্ষমতার মালিক এখন অ্যাডভোকেট মো. আবদুস সালাম। অধ্যক্ষের সাময়িক বরখাস্তের মাধ্যমে তিনি পুরো শিক্ষক সমাজ এবং এলাকাবাসীকে অপমান করেছেন।
কেশরহাট ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্তের পর থেকে প্রতিনিয়ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম বলেন, তিনি নিয়ম বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করা হয়েছে।