পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকার কারণে তলিয়ে রয়েছে ১হাজার ২০০একর ফসলি জমি। প্রতিবছর বন্যার পর আশপাশের এলাকার পানি নেমে গেলেও রয়ে যায় ফসলি জমির পানি। ২০০ একর জমি রোপা আমন রোপণ করতে পারলেও জলাবদ্ধতার কারণে কোনো ফসল রোপণ করতে পারেনি ১হাজার একর জমিতে। যদিও শুকনো মৌসুমে শুধুমাত্র ইরি/বোরো ধান রোপণ করা হয়। তাও আগাম বৃষ্টি হলে সেই ফসলও যায় তলিয়ে।
এতে তিন ফসলে জায়গায় দুই ফসল চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওই এলাকার কৃষক। ১৫ বছর ধরে এমন জলাবদ্ধতার অবস্থা কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ধুবালিয়াপাড়া এলাকার। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
রোববার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, রাজিবপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের ধুবালিয়াপাড়া এলাকা থেকে বাউলপাড়া এলাকা পর্যন্ত ফসলি জমি জলাবদ্ধতায় রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা (গারোহাড়ী) এলাকার সেতুর নিচ দিয়ে বন্যার পানি পূর্ব-উত্তর দিকে ঢুকে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়। কিন্তু বের হতে পারে না। এছাড়াও বৃষ্টি হলও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ না থাকায় তলিয়ে থাকে ফসলি জমি।
কৃষকদের অভিযোগ, প্রায় দেড় যুগ ধরে বন্যার পানি ও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতায় তলিয়ে থাকে ফসলি জমি। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেন কেউ। জলাবদ্ধতার কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের।
ধুবালিয়াপাড়া এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, তার তিন একর জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে কোনো ফসল চাষাবাদ করতে পারেনি তিনি। প্রতিবছর গারোহাড়ী সেতুর নিচ দিয়ে বন্যার পানি টুকলে আর বের হয়ে যাওয়া কোনো উপায় নেই।
একই এলাকার কৃষক বদিউজ্জামান বলেন, তার দেড় একর জমিতে রোপা আমন ধান রোপণ করেছিলেন। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে সেই ধানও পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
কৃষক সোহরাফ হোসেন জানান, ওই এলাকায় তার পাঁচ একর ফসলি জমি রয়েছে। এরমধ্যে ৬০শতক জমিতে রোপা আমন ধান রোপণ করেছিলেন। এসব ফসলও সব তলিয়ে আছে। জলাবদ্ধতার কারণে বাকি জমিগুলোতে ফসল রোপণ করতে পারেনি তিনি।
ধুবালিয়াপাড়া এলাকার আমির উদ্দীন বলেন, তার দেড় একর জমির মধ্যে এক একর জমিতে রোপা আমন ধান লাগিয়েছিলেন। জলাবদ্ধতার কারণে সব ধান গাছ পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
বাউলপাড়া এলাকার কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, তিনি ৬০শতক জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছিলেন। তারও সব ধান গাছ পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
একই এলাকার আরফান আলীর জানান, তার দুই একর ফসলি জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে কোনো ফসল রোপণ করতে পারছেন তিনি। একই কথা বলেন, ধুবালিয়াপাড়া এলাকার সহিন মিয়া।
রাজিবপুরের কাচারীপাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় তার ১০ একর ফসলি জমি আছে। তারমধ্যে পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে পাঁচ একর জমির রোপা আমন ধান।
ধুবালিয়াপাড়া এলাকার কৃষক বরকত আলী বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে তার চার একর জমিতে রোপা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শাহাবুদ্দিনের দাবি, পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ না থাকার কারণে ফসল রোপণে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা।
স্থানীয় আবদুর রহিম নামের এক অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য বলেন, বাউলপাড়া এলাকার পূর্বপাশে ১২ গজ দৈর্ঘ্যরে একটি পাইপ বসাতে হবে। এটি সরাসরি পানি জিঞ্জিরাম নদী গিয়ে পড়বে। তাহলে গোটা এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।
রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন জানান, ওই এলাকায় ৭০০ কৃষক পরিবারের ১হাজার ২০০ একর ফসলি জমি রয়েছে।
রাজিবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিরন মো: ইলিয়াস জানান,বিষয়টি উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রাজিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন মিয়ার ভাষ্য, তিনি ওই জলাবদ্ধতা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কিভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যায়, তা উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।