বিশ্বব্যাপী স্থূলতা সংকটের অবসান ঘটাতে ব্যবহারিক সমাধানের প্রচারের লক্ষ্যে প্রতিবছর ১১ অক্টোবর পালন করা হয় বিশ্ব স্থূলতা দিবস। এই উদযাপনের মূল উদ্দেশ্যই হল বিশ্বব্যাপী যে স্থূলতার সংকট চলছে, তার অবসান ঘটাতে ব্যবহারিক সমাধানের প্রচার করা। স্থূলতা এটি রোগ, যা শরীরের অতিরিক্ত মেদকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আজকের দিনে স্থূলতা একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা। ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের কারণ হল এই স্থূলতা। এক গবেষণায় দেখা যায় বর্তমানে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন স্থূলতার স্বীকার। আর এই স্থূলতার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ফাস্টফুড গ্রহণ। বার্গার, স্যান্ডউইচ, পেস্ট্রি, কেক, বিস্কুট, শিঙাড়া, সমুচাসহ মুখরোচক সব খাবার ফাস্টফুড নামে পরিচিত। চটজলদি খিদে মেটালেও এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও স্থায়ী স্থূলতার জন্য দায়ী। দেখা যাচ্ছে দেশের প্রতিটি স্কুল-কলেজের সামনে ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে খাবার কিনে খাচ্ছে শিশু ও তাদের অভিভাবকরা। এসব ফাস্টফুডে থাকে প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, শর্করা, আর্টিফিশিয়াল স্বাদ ও প্রিজারভেটিভ। ফলে এগুলো খেয়ে শিশুসহ সবাই আক্রান্ত হচ্ছে স্থূলতায়। তিন বছর বয়সের আগে শিশুদের এই ফাস্টফুড খাওয়ালে তাদের আইকিউ কমে যায়। ২০১০ সালে লন্ডনে এক গবেষণায় দেখা যায়, তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের ফাস্টফুড খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অন্য দিকে সেসব শিশুকে ফলমূল, শাকসবজিসহ গৃহে তৈরি তাজা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়, তাহলে তাদের আইকিউ ৫ পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে। পাশাপাশি এসব খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয় ফলে মানুষ খুবই সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিনিয়ত ফাস্টফুড গ্রহণে স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিগত ৪০ বছরে স্থূলকায় মানুষের হার প্রায় দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসের মতো অনেক সমস্যা। অতিরিক্ত পরিমাণে ফাস্টফুড গ্রহণের ফলে মানুষের মধ্যে টাইপণ্ড২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্থূলকায় হবার আশঙ্কা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফাস্টফুডে থাকা অতিরিক্ত শর্করা ও প্রক্রিয়াজাত মাংস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, বেশি পরিমাণে ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি ১২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। ফাস্টফুড তাদের জন্য একটি জনপ্রিয় বিকল্প যাদের সময় কম, কিন্তু এটি অনেক অপূর্ণতা এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আসে। এটির উপকারিতা থেকে অপকারিতা অনেক বেশি। তাই এই দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য আজ বিশ্ব স্থূলতা দিবসে ফাস্টফুড থেকে বিরত থাকার অঙ্গিকার নিতে হবে।