বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেজনক। মহাসড়কে ডিভাইডার তৈরি করা হয়েছে। শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, গাড়ি ও অব্যবস্থাপনা দুর্ঘটনার বড় কারণ। নানা অনিয়মের কারণে সড়কে মৃত্যুর মিছিল লেগেই থাকে। যাদের এসব অনিয়ম দেখার কথা, তারাও বোধ হয় উদাসীন। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই দুর্ঘটনার পেছনের কারণগুলো জানে। নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা নিলে দুর্ঘটনা কমবে। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনগণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংবাদমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি প্রতি মাসে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। সংগঠনটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, গত সেপ্টেম্বরে ৪০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৭ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭২ জন মারা গেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। আহত হয়েছে ৬৫১ জন। কল্যাণ সমিতি বলছে, ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি বৃদ্ধি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি এবং এসব যানবাহনের সড়ক-মহাসড়কে অবাধে চলাচল, চলতি বর্ষায় সড়ক-মহাসড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো ইত্যাদি সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি প্রতিবারই কিছু সুপারিশ করে। এবারের সুপারিশে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মোটরসাইকেল ও ইজি বাইকের মতো ছোট যানবাহনের আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করতে হবে। দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান করতে হবে। রাতের বেলা বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। রাতে চলাচলে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি চলতি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার মাঝে সৃষ্ট ছোট-বড় গর্ত দ্রুত অপসারণ করা দরকার। আমাদের দেশে চালকদের বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ চালকেরই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আবার বৈধ লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন এমন চালকদের ৩১ শতাংশ কোনো অনুমোদিত ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নেয়নি। ফলে চালকদের বেশির ভাগই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত নয়। অনেক চালক রাত-দিন গাড়ি চালান। অত্যধিক ক্লান্তি এবং গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়। যেকোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য নজরদারি জোরদার করতে হবে।