চিরায়ত বাংলা নাটক মঞ্চায়নের অংশ হিসেবে শত বছর আগের লেখা কাজী নজরুল ইসলামের জনপ্রিয় ‘শিল্পী’ নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে শেরপুরে। জেলা শিল্পকলার আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থাপনায় মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চায়স্থ হয়। নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন নাট্যকার ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল জাবির। নাটকটির মঞ্চায়নে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শেরপুরের শিল্পীরা অংশ নেয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ৬৪ জেলায় চিরায়ত বাংলা নাটক মঞ্চায়নের অংশ হিসেবে শেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির জন্য নির্ধারণ করা হয় কাজী নজরুল ইসলাম রচয়িত নাটক ‘শিল্পী’। শিল্পী নাটকের আঙ্গিক গঠিত হয়েছে তিনটি দৃশ্য আর তিনটি চরিত্র শিরাজ, লায়লি ও চিত্রাকে নিয়ে। শিরাজ চিত্রকর, সুন্দরের পূজারী, ধ্যানি এক প্রেমিক। স্ত্রী লাইলি প্রেমিকা চিত্রা তার কাছে সুন্দরের প্রতিক, স্মৃস্টির প্রেরণা। লাইলি চরিত্রটি নজরুল স্মৃস্টি করেছে অনবদ্যভাবে। মোট কথা একজন চিত্রকরের জীবনের প্রেম ও সংসার জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে ‘শিল্পী’ একটি দর্শকপ্রিয় নাটক। নাটকে চিত্রকরের চরিত্রে গণমাধ্যমকর্মী ইমরান হাসান রাব্বী, লাইলী চরিত্রে তাহমিনা রহমান ও চিত্রা চরিত্রে সুইটি মল্ডল অভিনয় করেন। নাটকে চিত্রকরের জীবনের তিনটি সময়ের দৃশ্যায়ন করা হয়। লাইলী ও চিত্রার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্পও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পেশাদার অভিনেতা না হয়েও নাটকের মূল ভুমিকায় অভিনয় করে নিজেকে ধন্য মনে করছেন এ অভিনেতারা। নাটকের সিরাজের ভূমিকায় অভিনয়কারী শেরপুরের গণমাধ্যমকর্মী ইমরান হাসান রাব্বী জানায়, চিরায়তি বাংলা নাটক মঞ্চায়নের অংশ হিসেবে শেরপুরে আমাদের জাতীয় কবি, প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি নজরুলের লেখা যে নাটকটি মঞ্চায়ন হলো তাতে অভিনয় করে নিজেকে ধন্য মনে করছি। নাটকে একজন চিত্রকরের শিল্পী স্বত্বার বাইরেও নিজের প্রেম, পরিবার ও সুন্দরের পূজারি হতে পারে সে চরিত্রটিই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এ বিষয়ে শিল্পীর স্ত্রী লাইলি চরিত্রে অভিনয়কারী তাহমিনা জানায়, আমাদের ব্যক্তি জীবনে যে ঘটনাগুলো ঘটে শিল্পী নাটকের তেমনি একটি চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি এবং তা ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। নাটকের আরেক মূখ্য ভমিকায় ছিলেন চিত্রা। সে চিত্রার চরিত্রে অভিনয়কারী কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফা জাহান সুইটি জানায়, একজন শিল্পী স্বত্বার ভেতরে যে আরও একজন মানুষ আছে সে চরিত্র রূপায়ন করা হয়েছে। আমি সে চরিত্রে অভিনয় করেছি। খুবই ভালো লেগেছে আমার কাছে। মফস্বল শহরে মঞ্চ নাটক নেই বললেই চলে। তাই মঞ্চ নাটক নাটক প্রিয় মানুষ ভুলেই যাচ্ছিলো। তারপরও এ শিল্পী নাটকটি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অনেক দর্শক। এ বিষয়ে সীমা গোস্যামী নামে এক দর্শক জানায়, নাট্যমঞ্চ হচ্ছে বাঙালির অনুভূতির জায়গা, এখানে আসলে নিজেকে বাঙালির সংস্পর্শের মনে হয়। শিল্পী নাটকটি লেখক কবি নজরুল দারুণভাবে বাঙালির প্রেমকে তুলে ধরেছে। নাটকটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে আমার। নাট্যকার ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল জাবির এ নাটকের বিষয়ে জানায়, অস্তিত্বের দোলাচলে কাঠামোগত অবয়বে নাট্যনির্মাণ করা হয়েছে। প্রেমময় প্রাণের সিগ্ধ আবেয় আর বিরহের নীলাভ ধূসরতা একাকার হয়ে মঞ্চে চিত্রায়িত হয়েছে মোহ-মায়ায় রঙে-রূপে। দীর্ঘদিনের অমঞ্চায়িত নাটকটি নতুন করে মঞ্চায়ন বেশ সাড়া ফেলবে বলে মনে করেন নাট্যকার আল জাবির। শেরপুরের শিল্পীদের অসাধারণ পারফর্মেন্স করে নাটকটি ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জেলা শিল্পকলা একাডমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খয়রুম। তিনি আরও জানান, আগামীতে আরও নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে আমাদের সমাজে মঞ্চ নাটকের কদর বাড়াতে হবে। এ ধরনের মঞ্চনাটক আরও বেশি বেশি মঞ্চায়নের ব্যবস্থা হলে হারিয়ে যাওয়া শেরপুরের কৃষ্টি-কালচার ফিরে আসবে বলে মনে করছেন নাটকপ্রিয় ও সচেতন মহল। নাটকটির সেট, ডিজাইন, কোরিওগ্রাফি, লাইটিংয়ের কাজ করছেন দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের নাট্যকলা ও চারুকলার শিল্পীরা।