ষড়ঋতুর দেশ হিসাবে পরিচিত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধীরে ধীরে আমাদের দেশের ঋতুবৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বর্তমানে দেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষকে টিকে থাকতে বাড়তি লড়াই করতে হচ্ছে। কৃষি খাতে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব লক্ষণীয়। অতিশুষ্কতার শিকার নদী, পুকুর-ডোবায় পানির সংকট; ভূগর্ভেও পানির স্তর নেমে গেছে। ফলে গভীর নলকূপেও পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। ফলে পানির অভাবে জমির ফসল শুকিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকে কৃষক। আবার অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে ঘরে তোলার আগেই পানিতে ফসল ভেসে যেতে দেখা যায়। পনির অভাবে পাটসহ অন্যান্য ফসলও ঠিকমতো ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অল্প সময়ে অধিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। বাস্তবেও তাই লক্ষ করা যাচ্ছে। জানা যায়, টানা বর্ষণে সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরীর অনেক বাসাবাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। এতে দুর্বিষহ দিন কাটছে বাসিন্দাদের। সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও পানি ঢুকেছে। কিশোরগঞ্জে রেললাইনের মাটি সরে সাড়ে ৫ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মেহেরপুরে পানিতে ডুবে ফসল ও মাছের খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ চার জেলায় প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও ৭ হাজারের বেশি মাছের খামার ও পুকুর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। লক্ষ করা যাচ্ছে, কয়েক ঘণ্টা ভারি বৃষ্টিপাত হলেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ফসলের মাঠ, মাছের খামার ও পুকুর পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকসহ অন্যান্য পেশার প্রান্তিক মানুষকে সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করা না হলে তাদের অনেকেই পথে বসতে বাধ্য হবেন। বস্তুত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতের তীব্রতা হ্রাস, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদির প্রভাব কৃষি খাতে পড়ছে; ভবিষ্যতে এগুলোর তীব্রতা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অস্বাভাবিক হারে বরফ গলছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকাতে বিশ্বাবাসী একমত হলেও বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। এর অনিবার্য ফল হিসাবে অন্যান্য কুফলের পাশাপাশি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়বে। এতে আমাদের দেশ কতভাবে ক্ষতির শিকার হবে তা দেশের সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশগত সংকটে বিশ্ববাসী চিন্তিত। পরিবেশের এ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে আমাদেরও। বস্তুত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা সহজ নয়। এ কঠিন কাজে সফল হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।