বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম সকল লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে দেশপ্রেমের মহান ব্রত নিয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে। বাংলাদেশ আজ সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে একটি স্থিতিশীল, জঙ্গিমুক্ত মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে সুপরিচিত। বর্তমান সরকার পুলিশের জনবল বৃদ্ধি, আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন করে বাংলাদেশ পুলিশকে একটি বিশ্বমানের আইনি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যার ফলশ্রুতিতে আপনারা (এসআই ক্যাডেট) কর্মক্ষেত্রে যোগদান করে নিরপরাধ, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন।’ বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সকালে রাজশাহীর সারদায় পুলিশের প্রশিক্ষণের পাদপীঠ শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী খ্যাত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৯তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর ২০২১ ব্যাচের এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন, অভিবাদন গ্রহণ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মাঝে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর প্রিন্সিপাল (অতিরিক্ত আইজিপি) মীর রেজাউল আলম, বিপিএম (বার)। অনুষ্ঠানে আইজিপি তাঁর বক্তব্যে বলেন, নবীন পুলিশ অফিসার হিসেবে মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আপনারা হবেন জনগণের আস্থার প্রতীক, জনগণের পুলিশ। পুলিশ প্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। আপনাদেরকেই হতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট পুলিশ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা পুলিশের প্রধান দায়িত্ব উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পুলিশের কর্মপরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে অপরাধ সংঘটনের কৌশল। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ বাহিনীকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করে গড়ে তোলা হচ্ছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৯৯৯ জনগণের আস্থার জায়গা দখল করে নিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সদ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসআইরা দেশ গঠন ও জনসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে জনবান্ধব ও সেবাধর্মী পুলিশিংয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। করোনা মহামারীকালে বাংলাদেশ পুলিশের সুমহান আত্মত্যাগ ও অনবদ্য অবদানের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এ কোয়ারেন্টাইনকালে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি খাবার সরবরাহ থেকে শুরু করে শেষকৃত্য সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। সদ্য প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী ক্যাডেট এসআইদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে আইজিপি আরো বলেন, পুলিশ একাডেমি থেকে লব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে মাঠ পর্যায়ে নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতিনিয়ত অনুশীলন, জ্ঞানচর্চা ও বাস্তব জীবন হতে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হবে। অনুষ্ঠানে আইজিপি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের পদক প্রদান করেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন, বেস্ট ক্যাডেট মঞ্জয় কুমার কুন্ডু, বেস্ট অ্যাকাডেমিক আনিকা তাবাসসুম, বেস্ট ইন ফিল্ড এক্সিকিউটিভ রাবেয়া বসরী আঁখি, বেস্ট শ্যুটার তুর্ণ মোহাম্মাদ মুহতাসিম এবং বেস্ট সুইমার মো. তৌফিকুজ্জামান। পুরস্কার প্রদানের আগে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। প্যারেডে ৫১ জন নারীসহ ৭৬১ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। প্যারেড কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াকুব হোসেনের নেতৃত্বে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি কন্টিনজেন্টের সদস্যরা সুশৃঙ্খল, দৃষ্টিনন্দন ও বর্ণাঢ্য প্যারেড উপহার দেন। আইজিপি একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী, অতিরিক্ত আইজিপিগণ, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, রাজশাহী বিভাগ ও জেলায় কর্মরত উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রশিক্ষণার্থীদের অভিভাবকগণ ও আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।