আমাদের দেশে পণ্যে ভেজাল, খাদ্যে ভেজাল। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এখন ওষুধে ও ভেজাল। দেশে বর্তমানে প্রায় ৩০০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে মাত্র ৩ শতাংশ ওষুধ আমদানি করতে হয় আর ৯৭ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকেই দেশের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানি করে। কিন্তু কিছু লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্সবিহীন কোম্পানি অধিক মুনাফার জন্য ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করছে, যা মানুষের যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তার চেয়ে বেশি শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যদিও অসৎ উদ্দেশ্যে ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি, নকল ওষুধ উৎপাদন ও জ্ঞাতসারে বিক্রি, মজুত, বিতরণ বা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন, ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রি ও মজুতের মতো অপরাধ করলে যাবজ্জীবন সাজা এবং লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সের শর্তের বাইরে গিয়ে ওষুধ উৎপাদন, নিবন্ধন ছাড়া ওষুধ উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি, মজুত বা প্রদর্শন এবং সরকারি ওষুধ বিক্রি বা মজুত বা প্রদর্শন করলে ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু তারপড়েও বন্ধ করা যাচ্ছে না নকল ও ভেজাল ওষুধের কারবার। বর্তমানে শুধু মুখে খাওয়ার ওষুধই নয়- ইনহেলার, অয়েন্টমেন্ট বা ইনজেকশনের মতো ওষুধও নকল হচ্ছে। এমন উপাদান দিয়ে ইনহেলার তৈরি হয়েছে, যা উপকার তো করবেই না; বরং মারাত্মক ক্ষতি করবে। যে ওষুধের সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত। সেই ওষুধ নিয়ে চরম অরাজকতা চলছে বাংলাদেশে। এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর কারণে আমরা ওষুধ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দেশে কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি মেনে ওষুধ উৎপাদন করা হয় না। এ ছাড়া অবৈধপথে বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে অনুমোদনহীন ওষুধ। তাই যেসব কোম্পানি কোন নিয়ম-নীতি না মেনে হীন স্বার্থে নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন করছে সেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। অভিযোগ রয়েছে, অনেক কোম্পানির নিম্নমানের ওষুধ এখনো বাজারে থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করেও অনেক প্রতিষ্ঠান ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। তবে দেশে নকল ও নিম্নমানের ওষুধের উৎপাদন ও বিপণন পুরোপুরি বন্ধ না হলে ওষুধের আন্তর্জাতিক বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমরা আশা করব, মানহীন ওষুধ তৈরির সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং অবৈধভাবে কেউ ওষুধ উৎপাদনের চেষ্টা করছে কিনা, তা মনিটরিং করে খুতিয়ে দেখবেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে আহ্বান করছি, যেন এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা হয়।