প্রতিষ্ঠার দুই যুগেও মাছ-মাংস ও সবজি বিক্রেতাদের জন্য স্থায়ী পাকা শেড নির্মাণ হয়নি লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও উপজেলা সদর আলেকজান্ডার বাজারে। যে কারণে, অস্থায়ী দু’টি শেডে কোনো রকম ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন ওইসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পৌরসভার তত্ত্বাবধায়নাধীন ওই দু’টি শেডের একটি গেল বছরে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেলে ব্যবসায়ীরা অপর শেডসহ সড়কের দু’পাশে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে কোনো রকম বেচাকেনা করে আসছেন। এতে করে দুর্ভোগের কমতি ছিল না ক্রেতা-বিক্রেতাদের। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেখানে একটি ‘কিচেন মার্কেট’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘কোভিড-১৯ রিকভারি প্রজেক্টের’ আওতায় অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দে ‘কিচেন মার্কেটটির’ নির্মাণকাজ এখন এগিয়ে চলছে। কিন্তু একটি কুচক্রি মহল উন্নয়নমূলক এ কর্মকান্ডটি নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছেন। সরকারবিরোধী ওই চক্রটি নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত করতে একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদককে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য দিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশে সহযোগিতা করছেন। শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি করেছেন রামগতি পৌরসভার কাউন্সিলর ও বাজারের ব্যবসায়ীরা। পৌরসভার হলরুমে পৌর কর্তৃপক্ষ, আলেকজান্ডার বাজার পরিচালনা কমিটি ও বাজারের ব্যবসায়ীরা যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আয়োজকরা জানান, ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত এ পৌরসভাটির প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র আলেকজান্ডার বাজারের দু’টি শেড স্থানীয় পৌরবাসীর জন্য নিত্য খাদ্যদ্রব্য কেনাবেচার একমাত্র উপযুক্ত স্থান। কিন্তু গত বছর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ‘আল-আমিন টলশেড’ নামে একটি শেড সম্পূর্ণ পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অর্ধশত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফুটপাথের ব্যবসায়ী হয়ে পড়েন। এতে যানজটসহ বিভিন্ন দুর্ভোগের সৃষ্টি হয় স্থানটিতে। পরে বাজারের পরিচালনা কমিটির দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘কোভিড-১৯ রিকভারি প্রজেক্টের’ আওতায় একটি ‘কিচেন মার্কেট’ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এজন্য নির্মাণাধীন মার্কেটের স্থানের ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত করে তাঁদেরকে পুড়ে যাওয়া আল-আমিন মার্কেটের পরিত্যক্ত স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেখানে ৪০ জন ব্যবসায়ী ঝুঁড়িতে করে এখন নিয়মিত সবজি বিক্রি করে আসছেন। সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহাদাত হোসেন জানান, কিচেন মার্কেট নির্মাণকালীন সময়ের জন্য সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে ওইসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়ার জন্য আল-আমিন মার্কেটে বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বাজারের পরিচালনা কমিটির লোকজনই এটি করেছেন। এখানে কোনো দখল বা অর্থনৈতিক লেনদেন হয়নি। তিনি বলেন, কিচেন মার্কেটটি নির্মাণ হলে এ ব্যবসায়ীদের সেখানে স্থান করে দেওয়া হবে। এতে পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন জানান, কিচেন মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় তাঁদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় উপক্রম হয়েছিল। পরে বাজার পরিচালনা কমিটি ও পৌর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়ে তাঁদেরকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি ডাল-ভাত খেতে পারছেন। না হলে কয়েক মাসের জন্য তাঁর ব্যবসা বন্ধ থাকতো। তিনি বলেন, একাজে তাঁর একটি টাকাও ব্যয় হচ্ছে না। এমনকী পৌর কর্তৃপক্ষ সাময়িক এ সময়রে জন্য তাঁদের কাছ থেকে কোনো ভাড়াও নিচ্ছেন না। আলেকজান্ডার বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামছুল বাহার খন্দকার জানান, তাঁদের অনুরোধসহ বাজারের কাঁচাবাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ লাঘবে পৌর কর্তৃপক্ষ কিচেন মার্কেটটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। আর নির্মাণকালীন সময়ের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তাঁরা সবজি বিক্রেতাদের সাময়িকভাবে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন। এখানে কোনো দখল বা অনিয়ম হয়নি। কারণ, সেখানে দোকান নির্মাণ বা স্থায়ী কোনো কিছু বসানো হয়নি। তিনি বলেন, বাজারের উন্নয়নবিরোধী একটি চক্র মানবিক ও উন্নয়নমূলক এ কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভিন্ন অপপ্রচারে লিপ্ত। তাঁদের সরবরাহকৃত তথ্যে প্রকাশিত ওই সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাই আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান করছি। সংবাদ সম্মেলনে এঁরা ছাড়াও পৌর কাউন্সিলর মূর্তজা আল-আমিন, দিদারুল ইসলাম খন্দকার, জয়নাল আবদীন, নিজাম উদ্দিন, নেছার উদ্দিন, তাপস চন্দ্র দাস, গীতা রানী দাস, আকলিমা বেগম, নাছিমা বেগম, মো. নুরনবী, বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি শামছুল বাহার খন্দকার, সহসভাপতি আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, কোষাধ্যক্ষ মেজবাহ উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজী কামাল উদ্দিন, ব্যবসায়ী কনক দাস, হাফেজ মাঈনউদ্দিন, মো. সিরাজ ও আহাম্মদ উল্যাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।