আমাদের দেশের জনসংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নানা রোগব্যাধি। রোগব্যাধির চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে ওঠছে। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্স ও মিডওয়াইফদের চাহিদাও বাড়ছে। তবে দুংখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত মানসম্পন্ন নার্স ও মিডওয়াইফদের সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়, সরকারি হাসপাতালে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এটার মূল কারণ নার্স ঘাটতি। চিকিৎসক অনুপাতে নার্সের ঘাটতি বাড়ছে। রোগীর সঠিক চিকিৎসাসেবায় একজন চিকিৎসকের জন্য তিনজন নার্স দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে এই চিত্র উল্টো। চিকিৎসক ও নার্স অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১:০ দশমিক ৩৩। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের জন্য একজন নার্সও নেই। যেখানে রোগীদের সঠিক চিকিৎসাসেবা দিতে হলে এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নার্স দরকার ৩ লাখ ৬০ হাজার জন। কিন্তু আছে সরকারি ও বেসরকারি মিলে মাত্র ৭৭ হাজার ৮৩৮ জন। অর্থাৎ প্রয়োজনের মাত্র ২২ শতাংশ নার্স আছে দেশে।
দেশের সরকারি হাসপাতালে এখন নার্সের চেয়ে চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ সরকারিভাবে প্রয়োজনের মাত্র ৪১ শতাংশ নার্স রয়েছেন। তবে একজন নার্সের সর্বোচ্চ তিনজন রোগী নিয়ে কাজ করার কথা। কিন্তু সেখানে তাকে দেখতে হয় ১০০-১৫০ জন রোগী। সে ক্ষেত্রে তার জন্য মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এত রোগী দেখতে হয় যে রোগীর সঙ্গে ভালো করে কথা বলারও সময় পান না নার্স। যার ফলে যারা বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন, তারা বলেন এ দেশে নার্সদের ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস ভালো না। কিন্তু সেটা ভালো হচ্ছে না রোগী অনুপাতে নার্স কম থাকায়। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নার্সিং কর্মকর্তাদের জন্য সাত বিভাগে পদ ৪৪ হাজার ৯১৩। এর মধ্যে সরাসরি রোগীদের সেবার সঙ্গে জড়িত এমন দুই পদ সিনিয়র স্টাফ নার্স ও সহকারী নার্স আছেন ৪০ হাজার ৮৩৯ জন। তারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত। এই নার্সদের ২ হাজার ৬৪৭টি পদ শূন্য রয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল নিবন্ধিত দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে সরকারি চিকিৎসক ৩৩ হাজার ও বেসরকারি ৮৭ হাজার। রোগীর সঠিক সেবায় প্রয়োজনীয় নার্সের সংখ্যায় সব সূচকেই পিছিয়ে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক হারে নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ কারণে মানসম্মত নার্সিং শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই এ ক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। নার্সিং শিক্ষার নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নার্সিং শিক্ষায় উন্নতমানের কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। নার্স ঘাটতি পূরণে সরকারের নার্সিং সেক্টরকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া, অর্থ বিনিয়োগ করা ও সে অনুযায়ী বেশি নার্স নিয়োগ দেওয়া এবং কর্মক্ষেত্রে নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো সম্পন্ন হলে নার্স সংকট কেটে যাবে বলে আশা রাখছি।