ইলিশ বাঙালির কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমানে ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ রোলমডেল। ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে সরকার সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন আশাতীতভাবে বেড়েছে। বিগত ২০০২-০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন উদ্বেগজনকভাবে কমে ১ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টনে পরিণত হয়েছিল। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ইলিশের আহরণ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশকি ৭১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৯২ শতাংশ বেড়েছে। তাই ইলিশ মাছের প্রধান প্রজনন মৌসুমে নিরাপদ প্রজননের জন্য ১২ অক্টোরব থেকে ২ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত সারাদেশে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। ইলিশ মাছ সারা বছরই কম-বেশি ডিম দেয়; তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরই হচ্ছে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। অক্টোবর অর্থাৎ আশ্বিন মাসের প্রথম পূর্ণিমার ভরা চাঁদে ওরা প্রধানত ডিম ছাড়ে। এজন্য ইলিশ আহরণ, বিতরণ, বিপণন, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আগামী ২২ দিন এই নিষেধাজ্ঞা না মানলে আইনে এক থেকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। তবে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকলে বেকার হয়ে পড়বেন দেশের দুই লাখের অধিক জেলে। যে কারণে অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার মুখে পড়বেন জেলেরা। যদিও এ সময়ে পদ্মা-মেঘনা নদীতে মাঝ ধরার জন্য নিবন্ধিত ৪৩ হাজার ৭৭২ জন জেলেকে সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিএফ সহায়তা দেওয়া হবে এবং এ বছর পাঁচ কেজি করে চাল বাড়িয়ে দেওয়া হবে। আগে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হতো। এখন ২৫ কেজি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে কোনো জেলে নদীতে নামতে পারবেন না। কিন্তু এদিকে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে পরিবার-পরিজনের ভরন-পোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে জেলেরা। এরমধ্যে সরকারি সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ অনেক জেলের। প্রকৃত জেলেদের সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন জেলেরা।
প্রতিবছর সরকার দুইবার ইলিশ ধরতে নিষেধ করে। তখন কিছু জেলে আছে, যারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ ধরে। আর যারা ধরে নিরুপায় হয়ে ধরে। কারণ সরকার যে চাল দেয় তা দিয়ে তাদের কিছু হয় না। চালের সঙ্গে আরও জিনিস লাগে, তার খরচ কে দেবে। ফলে তাদের দাবি মেনে নিয়ে চালের সঙ্গে যেন আর্থিক সহায়তা পান সে দায়ীত্ব সরকারকেই নিতে হবে। তাই সরকারের কাছে আহ্বান থাকবে, যেন জেলেদের দাবি মেনে তাদের সাহায্য সহযোগীতা করা হয়। যাতে এ বছরের অভিযান সফল ও আগামীতে ইলিশ উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে আরও বেশি তৎপরতার সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনাকে মাছ আহরণের কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত আরও কঠোর নজরদারি, দেখভাল করতে হবে। তাহলে ইলিশের দামকে সহনীয় পর্যায়ে আনাও সম্ভব হবে। জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষার চলমান কার্যক্রমসমূহ এভাবেই বাস্তবায়ন করা হলে সারাবছর ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে। এ কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং আপামর জনগণ বিশেষ করে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের আন্তরিক সহযোগিতা অপরিহার্য। মা ইলিশ রক্ষা করা শুধু মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কিংবা মৎস্য অধিদপ্তরের নয় জাতীয় সম্পদের উন্নয়ন এবং দেশের স্বার্থে এ দায়িত্ব দেশের প্রত্যেক মানুষের।