কুড়িগ্রামের চিলমারীতে রমনা মডেল ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। এর আগে ওই ইউনিয়নের মো. রজব আলীকে সভাপতি ও আনোয়ারুল ইসলাম কে সাধারণ সম্পাদক করে একটি আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। তবে কমিটি অনুমোদনের সাত দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া কথা থাকলেও প্রায় দেড় বছরেও সেই কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু তাই নয় মাঠ পর্যায়ে নেতা কর্মীরা বলছেন আংশিক কমিটি অনুমোদনের পর থেকে সাংগঠনিক ভাবে সক্রিয় হতে পারেনি দলটি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউনিয়ন কমিটির সংক্রিয় ভূমিকা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাঠ পর্যায়ে বা ওয়ার্ডের কর্মীদের সঙে মতবিভেদ রয়েছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস যাবৎ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম লাপাত্তা। নির্বাচনের অন্তিম সময়ে দলের নেতার অনুপস্থিতিতে ছন্নছাড়া অবস্থায় ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা। অপরদিকে অনেকেই বলছেন, দলটির সাধারণ সম্পাদক পদপদবী দেওয়ার নাম করে ওই ইউনিয়নের লোকজনের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। এছাড়াও ব্যবসায়ের কথা বলেও টাকা আত্মসাৎ করছেন। তবে, অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মানুষের সাথে মানুষের লেনদেন থাকতেই পারে। তবে পদপদবী দেওয়ার নামে কারো নিকট থেকে টাকা নেয়া হয়নি। এটা মিথ্যা।’ মাঠ পর্যায়ে ওয়ার্ডে নেতা কর্মীদের সঙে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। রমনা মডেল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের কমিটির দায়িত্বে যে সভাপতি ও সেক্রেটারী আছেন। তার মধ্যে সেক্রেটারী অনেক দিন ধরে নাই। এলাকায় না থাকায় বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মূখীন হতে হচ্ছে। যেহেতু সামনে জাতীয় নির্বাচন তাই সুসংগঠিত ভাবে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে কাজ করে যেতে হবে। যেহেতু অনেক দিন থেকে কমিটির সাধারণ সম্পাদক নেই এলাকায় তাই উপজেলার নেতাকর্মী যারা আছেন তারা বিষয়টি আমলে নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।’ ওই ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘দেড় বছর আগে কমিটি হয়। তবে সেসময় সাত দিনের মাথায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হয়নি। এখন কি কারণে হলো না? আর সামনে যেহেতু নির্বাচন সেক্ষেত্রে নেতৃত্ব ছাড়া নির্বাচন করা সম্ভন নয়। আর যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনুপস্থিত থাকে। সেই সংগঠনটি কিভাবে চলে এটা আসলেই ভাবার বিষয়। আরেকটি বিষয় আমি লোকমূখে শুনতে পাই সাধারণ সম্পাদক নাকি মানুষের টাকা পয়সা আত্মসাৎ করেছে। আর উনি নাকি এখন বাড়িতে নাই। যদিও বিষয়টি আমার সঠিকভাবে জানা নেই। উপজেলার আহ্বায়ক কমিটির যারা আছেন বিশেষ করে আমাদের সাধারণ সম্পাদকের বিষয়টি আমলে নিয়ে দেখবেন।’ রমনা মডেল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগদানের জন্য মরিয়া রাসেল মিয়া নামে একজন জানান, ‘আমি রমনা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগদানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে যারা রমনার স্বেচ্ছাসেবক লীগে দায়িত্বে আছেন আসলে তাদের নিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য কাজ করা বিপদজনক। সভাপতি-সেক্রেটারী মনোমালিণ্য রয়েছে। দলের জন্য কিছু করছেন না। সেক্রেটারী গত তিন মাস ধরে এলাকায় নেই। আমরা যারা দলে অন্তর্ভূক্ত হতে চাচ্ছি এনাদের অনুপস্থিতিতে হতে পারছিনা। তারা যদি দলকে ভালোবাসে তাহলে এলাকায় এসে আমাদের সাথে নিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাক। তারা যদি না আসে তাহলে উপজেলার যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা ভালো একটা ব্যবস্থা নেবেন।’ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী দুখু মিয়া বলেন, ‘আমি সাবেক ছাত্র নেতা, দেড় বছর আগে নতুন এই কমিটি স্বচ্ছতার সাথে হওয়ায় আমি যোগদান করি এই সংগঠনে। সেক্রেটারি অনেকের থেকে টাকা নিয়ে এখন বেপাত্তা হয়েছেন। এলাকায় প্রবেশ করতে পারছেন না। এখন তার জন্য ইউনিয়ন কমিটি অবহেলীত হচ্ছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। উপজেলার যারা নেতা আছেন তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দলকে সংগঠিত করবেন।’ রমনা মডেল ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘পদপদবীর কথা বলে কারো কাছ থেকে টাকা নেই নি। এটা মিথ্যা বানোয়াট। আর মানুষের সাথে মানুষের লেনদেন থাকতে পারে সেটা স্বাভাবিক বিষয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কমিটি অনুমোদনের সাত দিনের মাথায় পূণাঙ্গ কমিটি দেয়ার কথা সেটা আমরা সাংগঠনিক ভাবে জবাব দেবো।’ সাংগঠনিক কার্যক্রমে সংক্রিয়তা কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, ‘শোনের ভাই আমার ছেলের নাম রাকিবুল। সাংগঠনিক কোনো ব্যর্থতা প্রকাশ করি সেখানে সংগঠনের কাছে জবাবদিহিতা করবো তাই না। আর আমি যে বাংলাদেশ ছাড়ি আমিরিকা গেছি বাংলাদেশ আসবো না সেটা নয়। দুই চারপাঁচ দিনের মধ্যে আসতেও পারি।’ এ বিষয়ে ইউনিয়ন সভাপতি মো. রজব আলী জানান, ‘সেক্রেটারি ঢাকায় গেছে আমাকে বলেও যায় নি। সে আসবে, সে না আসলে তো বলবে। আমরা কমিটিকে স্বতঃস্ফূর্ত করতে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। দলকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বাবু বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে সামনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা কোনো ধরণের কোন্দলের মধ্যে নেই। সাংগঠনিক নিয়মে যেটা করতে হবে আমরা সে টাই করব। নির্বাচনের আগে আমাদের রমনা ও থানাহাট ইউনিয়নের কমিটি দেয়া জরুরী। আমি এ বিষয়টি নিয়ে জেলায় কথা বলেছি।’ দলটির আহ্বায়ক আবু হোসাইন সিদ্দিক রানা জানান, ‘কেউ যদি পদে থেকে মানুষের নিকট পদপদবির কথা বলে টাকা পয়সা নেয় তাহলে আমরা সেটা খতিয়ে দেখে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। সে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক যেই হোক না কেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে দলকে সক্রিয় করতে যেসব পদক্ষেপ দরকার আমরা সেটা করব।’