শরতের কাঁশফুলে বাতাসের তরঙ্গ উঁকি দিয়ে বলছে শুভ্রতায় ভরে যাচ্ছে প্রকৃতি আর শিল্পীর রঙতুলিতে রাঙিয়ে দিচ্ছে দেবী দূর্গার অবয়বখানি। শিল্পীর দৃষ্টি মগ্ন থাকছে মায়ের ত্রিনয়নী মুখচ্ছবি অঙ্কনে। শরতের কাঁশফুলে সেতুবন্ধন করেছে শিল্পীকে রংতুলির সাথে। আর মাত্র দুইদিন পরেই শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছে প্রতিমা কারিগররা। এখন চলছে শিল্পীর তুলির নিপূন ছোঁয়ায় প্রতিমায় রঙ রাঙ্গানো ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ। শস্য শ্যামল নদী পাহাড় বন ও সাগর ঘেরা পৃথিবীর লক্ষকোটি ভক্ত হৃদয়ের আহ্বানে ঐশ্বর্য্যদায়িনী, মহিষাসুরমর্দিনী, দূর্গতিনাশিনী, মাতৃরূপিনী জগৎজননী ‘মা' আসছেন মর্ত্যধামে। আর এজন্য লালমনিরহাটে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সব চেয়ে বড় ধরমীয় উৎসব শারদীয় উৎসবের ধুম পড়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের ঘরে ঘরে। আগামী শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দূর্গা পূজা শুরু হবে এবং মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দশমী ও বিসর্জনের মাধ্যমে শারদীয় পূজা সমাপ্ত হবে। আনন্দঘন পরিবেশে সাড়ম্বরে পূজা উদযাপন করতে পারবেন বলে আশাবাদী পূজার আয়োজকেরা। শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন। আর পূজারিরা, পূজা আয়োজক ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা বলছেন, আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে এবার সার্বজনীন এই মহোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে লালমনিরহাটে এবার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন তারা। লালমনিরহাট পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটি জানায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ও সর্ব বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলা ও দুই পৌরসভায় এবারে মোট ৪শত ৬৩টি পূজা মন্ডবে দূর্গোৎসব চলবে। তন্মধ্যে লালমনিরহাট সদর উপজেলা ও পৌরসভায় মোট ১শত ৬০টি, আদিতমারী উপজেলায় মোট ১শত ১৪টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৮৯টি, হাতীবান্ধা উপজেলায় ৭১টি ও পাটগ্রাম পৌরসভা এবং উপজেলায় মোট ২৮টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সোমবার (১৬ অক্টোবর) সরেজমিনে স্থানীয় একাধিক পূজা ম-পে গিয়ে দেখা যায়, এবারের পূজাকে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রতিমায় শিল্পীর শৈল্পিক কারুকাজে মনোমুদ্ধকর করে সজ্জিত করতে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। লালমনিরহাট গোশালা বাজার মন্দিরের মৃতশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের পেশা ধরে রাখতে এ পেশা বেছে নিয়েছেন। কালীবাড়ি বাজার দূর্গা মন্দিরে কর্মরত মৃতশিল্পীরা জানান, প্রতিটি ম-পের প্রতিমা তৈরিতে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে। লালমনিরহাট পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হিরা লাল রায় বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে এ বছর লালমনিরহাট জেলায় এবারে মোট ৪শত ৬৩টি পূজা মন্ডবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে লালমনিরহাট জেলায় এবার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশসহ ব্যাপক প্রস্তুতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধর্ম যার যার হলেও উৎসব সবার। তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা বলয় থাকছে এবার দুর্গা উৎসবে। প্রতিটি ম-পে আনসার সদস্য থাকবে। এছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ র্যাবের টহল জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পুরোহিতদের মতে, বিশ্ব শান্তির পাশাপাশি মানব কল্যাণে দুর্গার আবির্ভাবে সকল গ্লানিমুক্ত হবে বলে বিশ্বাস তাদের।