র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা কোনো মানুষ বা প্রাণী আক্রান্ত হলে যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় জলাতঙ্ক রোগ। কুকুর, বিড়াল, বানর, বাদুড়, বেজি ইত্যাদি প্রাণী র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং এরা মানুষকে কামড়ালে এই রোগ হয়। এটি এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণীর দেহে স্থানান্তরিত হতে পারে তার লালা বা রক্তের দ্বারা। জলাতঙ্ক একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্কের প্রদাহ সৃষ্টি করে। জলাতঙ্ক প্রাচীনতম সংক্রামক রোগের একটি। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে পানিভীতি, আলোভীতি, বায়ুভীতি হলেও এর শেষ পরিণতি মৃত্যু। এই রোগের মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ। বিশ্বের প্রায় সকল দেশের প্রাণীর মধ্যেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। প্রতি বছর বিশ্বে যত মানুষ কুকুরের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার ৯৯ শতাংশই এই রোগের কারণে হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন এবং প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যান। বাংলাদেশেও বছরে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেন জলাতঙ্কে। শুধু মানুষই নয়, প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার গবাদিপশুও জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে থাকে দেশে। র্যাবিস ভাইরাস প্রায় সব স্তন্যপায়ী প্রাণীকেই আক্রান্ত করতে পারে। মানুষ সাধারণত কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্কে বেশি আক্রান্ত হন। যে কুকুর র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সেই কুকুর কাউকে কামড়ালেই জলাতঙ্ক রোগ হয়। দেশে বেশির ভাগ জলাতঙ্ক রোগই হয় কুকুর কামড়ালে। এই রোগ মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডকে প্রভাবিত করে। তবে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর উন্নত দেশসহ অধিকাংশ দেশ এ রোগের সংক্রমণ সংখ্যা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। এই ভাইরাসের অনেক রকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে। সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হলো হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন। অন্যান্য টিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, ডাক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন ইত্যাদি। এই রোগের প্রতিরোধ করতে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। এজন্য রাস্তার কুকুর বিড়াল দ্বারা কামড়ের স্বীকার হলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমে ক্ষতস্থানটি সাবান ও পানি দিয়ে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধৌত করতে হবে। অতঃপর আয়োডিন দ্রবণ দিয়ে পুনরায় পরিষ্কার করতে হবে। তারপর হাসপাতাল থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জলাতঙ্কের ভ্যাক্সিন নিতে হবে। সবসময় মনে রাখতে হবে জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু যদি আক্রান্ত রোগীর মধ্যে এই জলাতঙ্কের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া শুরু করে তাহলে সেই রোগীর মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ। তাই কুকুর বিড়াল দ্বারা কামড়ের স্বীকার হলে কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসা নিতে হবে।