বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম সম্প্রতি আকাশছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এতে সীমিত ও স্বল্পণ্ডআয়ের মানুষের দুর্ভোগ কতটা বেড়েছে, তা বহুল আলোচিত। অনেকে বাধ্য হয়ে শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার কেনাও কমিয়ে দিয়েছেন। বস্তুত বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সব শ্রেণির ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠেছে। দুঃখজনক হলো, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান পরিচালনার নজির নেই। মৌসুমে চালসহ বিভিন্ন শস্য বা সবজির দাম তুলণামূলক কম থাকে। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, মৌসুমেও চালসহ বিভিন্ন শস্য বা সবজির বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। বস্তুত অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে নিত্যপণ্যের বাজার যখন-তখন অস্থির হয়ে ওঠে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সম্প্রতি বলেছেন, কয়েকদিনের মধ্যে সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে ডিমের মতো আলু আমদানিরও সুপারিশ করা হবে। ডিম, আলু পেঁয়াজ-এসব পণ্যের বাজারও যখন-তখন অস্থির হয়। এতে এটাই স্পষ্ট-অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে যখন-তখন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এমন বাস্তবতা সত্ত্বেও এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, সিন্ডিকেট বলে কোনো সংস্থা বা গোষ্ঠী নেই। তার বক্তব্য বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ধরনের বক্তব্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হতে পারে। পরিকল্পনামন্ত্রীর এ বক্তব্যে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছে। ভরা মৌসুমে কেন চালের বাজার অস্থির থাকে, সেই রহস্য উদ্ঘাটন করা দরকার। অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেট সদস্যরা যোগসাজশের মাধ্যমে ভরা মৌসুমেও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো তারা তৈরি করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট। সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করার দায়িত্ব সরকারের। অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়াবে আর কর্তৃপক্ষ নীরব থাকবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মানুষ সরকারের জোরালো ভূমিকা দেখতে চায়। মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজির বিষয়টিও বহুল আলোচিত। মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে ভোক্তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ভোক্তা মানহীন, এমনকি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য কিনতেও বাধ্য হচ্ছেন। বস্তুত বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ দুর্বলতা কাটাতে সরকারকে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। যখন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়, তখন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা আরও বেড়ে যায়; সংশ্লিষ্ট পণ্যের সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতেই স্পষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীরা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বাজার তদারকি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাতের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। কাজেই সরষের ভেতরের ভূত তাড়ানোর জন্যও কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।