রাজশাহীর তানোরে প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে প্রেমিককে আটক করে বেধড়ক পিটিয়েছে গ্রামবাসী। খবর পেয়ে তানোর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর ও রক্তাক্ত জখম অবস্থায় আহত ওই প্রেমিককে উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।
প্রেমিকের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। প্রেমিক বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরদিকে প্রবাসীর স্ত্রী ২ সন্তানের জননী পরোকিয়া প্রেমিকাকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
রোববার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে তানোর উপজেলা সরনজাই ইউপির ভাগনা মধ্যপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে, এ ঘটনায় তানোর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, সরনজাই ইউপির ভাগনা মধ্যপাড়া গ্রামের জৈনক প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউপির ধুরইল পন্ডিত পাড়া গ্রামের মৃত বারিকের পুত্র আরিফের সাথে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিলো। এরই সুত্র ধরে ১৫ই অক্টোবর রোববার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে প্রেমিক আরিফ তার পরোকিয়া প্রেমিকা প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে প্রবেশ করেন।
বিষয়টি টের পেয়ে প্রবাসীর ভাই গ্রামের লোকজনকে খবর দেন। এ সময় গ্রামের লোকজন এসে পরোকিয়া প্রেমিক যুগলকে আটক করে প্রেমিককে বেধড়ক মারপিট করা হয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পরিবারের লোকজনকে ডেকে প্রেমিকাকে তার বাবার বাড়ি ও প্রেমিককে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
এব্যাপারে প্রবাসীর ভাই বলেন, গ্রামের লোকজনের ভয়ে প্রেমিক ঘরের খাটের নিচে ঢুকে লুকিয়ে ছিলেন। এ সময় টেনে হেঁচড়ে বের করার সময় মাথায় আঘাত পেয়ে ক্ষত হয় এবং রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। এ সময় উত্তেজিত জনগণ কিল ঘুষি মারেন। পুলিশের হাতে না দিয়ে মারপিট করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান কারা কি ভাবে মেরেছে আমি বলতে পারব না। মেম্বার সবকিছু জানে বলে দায় সারেন।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম উদ্দীন বলেন, সবকিছু হয়ে যাওয়ার পর আমি সেখানে গিয়েছিলাম এবং পুলিশও ছিল। আরিফের মাথা ক্ষত হয়ে রক্ত বের হচ্ছিল এজন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর প্রবাসীর স্ত্রীকে তার বাবা মায়ের হাতে তুলে দেয়া হয়।
আপনি কিভাবে মিমাংসা করলেন ও আরিফ কে বেধড়ক পেটানো হল কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি মিমাংসা করিনি, অনেকের কথায় ও প্রবাসীর দুই সন্তানের কথা বিবেচনা করে পিতা মাতার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে বলে তিনিও দায় সারেন।
ধুরইল পন্ডিত পাড়া গ্রামের এক ভ্যান চালক বলেন, রাত প্রায় একটার দিকে আরিফের বড় ভাই আমাকে হাসপাতাল নিয়ে যান। গিয়ে দেখি আরিফের মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ দেয়া আছে। ডাক্তাররা সাব জানিয়ে দেন রোগীকে বাঁচাতে হলে দ্রুত রামেক হাসপাতালে নিতে হবে। সাথে সাথে ভ্যানে করে বাড়িতে এসে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে আমি ত্রি মোহনী মোড়ে নিয়ে যায়। সেখান থেকে গাড়ীতে করে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, তানোর হাসপাতালে পুলিশ ছিল ও আরিফের মোবাইল নিয়ে জিম্মায় স্বাক্ষর করে পাঠায় বলেও জানান ওই ভ্যান চালক।
আরেকজন ব্যক্তি বলেন, অপরাধ করতে পারে তাই বলে অমানুষের মত মারবে এটা কোন ধরনের কথা। আরিফের মাথায় অগণিত সেলাই পড়েছে। সেলাইয়ের জন্য ১৭শ টাকার সুতা কিনতে হয়েছে। সে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আরিফের স্ত্রী জানান, সে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, রাতে যখন নিয়ে আসে কথাবার্তা কিছুই বলতে পারছিল না। আমাদের ঘরে পাঁচ বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে।
তানোর থানার এএসআই ফরিদ হোসেন বলেন, রাত প্রায় একটার দিকে ওসি স্যারের নির্দেশে সরনজাই ইউপির ভাগনা গ্রামে যায়। সেখানে গিয়ে আরিফকে পায়নি। প্রবাসীর স্ত্রী ছিল। মেম্বারসহ লোকজন প্রবাসীর স্ত্রী কে পিতা মাতার হাতে তুলে দেন। তবে আরিফকে প্রচুর মেরেছে। কোন অভিযোগ না থাকায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
এবিষয়ে তানোর থানার ওসি আবদুর রহিম বলেন, ঘটনা জানার পর পুলিশ কে পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনায় কোন পক্ষ অভিযোগ করেন নি। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।