সাধারণত চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দিনমজুর থেকে শুরু করে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ, অর্থনীতিবিদ সবাই এক ধরনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন এখন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমছেই। আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা চেষ্টার পরও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। মানুষের ভোগ চাপের মুখে পড়ছে। দেশের আর্থিক খাতের ঝুঁকি বেড়েছে। ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ, খেলাপি ঋণ এবং ঋণ অবলোপনের প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভ কমছে। এ ছাড়া রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের গতি কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ এখন কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি (২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯০ কোটি (২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার। বিশ্বব্যাংক বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এটি নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকে, এর ওপর। বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জ্বালানির উচ্চমূল্য, দুর্বল মুদ্রানীতি, টাকার অবমূল্যায়ন, পণ্যের সরবরাহ সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। একই সঙ্গে মজুরি না বাড়ায় মানুষের ভোগব্যয় কমছে, যা জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ অন্য ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন তিনটি মূল চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে মূল্যস্ফীতি। অন্যান্য খাতের পাশাপাশি আর্থিক খাতের দুর্বলতাও অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সরকারকে দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে নিত্যপণ্যের শুল্ক হ্রাসের উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে কিছু সংস্কার কাজ হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এটা ভালো। সুদের হারের ক্যাপ ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার হচ্ছে, কিন্তু আরও করতে হবে। আগামীর পরিবেশ অর্থাৎ নির্বাচনের পরিবেশ যদি ভালো থাকে, তাহলে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। মানুষ যদি উন্নয়নের পক্ষে থাকে, তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে।