বাগেরহাটের শরণখোলার সিডর বিধ্বস্থ’ সাউথখালীতে বেড়িবাধে বিশাল ভাঙন দেখা দেয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা সংলগ্ন দোকানপাট সরিয়ে নিচ্ছে এলাকাবাসী। ঝুকিপূর্ণ এলাকায় নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মাণ করায় এ ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল দাবি করছে। যে কারণে বাঁধের স্থায়ীত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড় সিডরে সবচেয়ে ক্ষতি হয় শরণখোলার সাউথখালীতে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জলোচ্ছাসে প্রাণ হারায় নারি পুরুষ শিশুসহ শত শত মানুষ। লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব কিছু। তাই সিডর পরবর্তী মানুষের একটাই দাবী ছিল “ত্রান চাই না মোরা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই”। এলাকাবাসীর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিটার বাঁধ উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়। ‘সিএইচডব্লিউই’ নামে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি শুরু করে টেকসই বাঁধের কাজ। তিন বছরে পুরো বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হতে লাগে প্রায় ৭ বছর। তিন দফা কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পর বাঁধের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ায় চলতি বছরের ডিসেম্বরে বাঁধটি পাউবোর কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
কিন্তু হস্তান্তরের আগমূহুর্তে বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে সাউথখালীর গাবতলা এলাকার বেড়িবাঁধে দেখা দিয়েছে বিশাল ভাঙ্গন। এই ভাঙন বাঁধের স্থায়ীত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় একহাজার ফুট বেড়িবাঁধ বিলিন হয়ে গেছে। এর আগে সকালে ভয়াবহ ভাঙনে রিংবাঁধের বহিরাংশের কমপক্ষে ৬ বিঘা জমি গাছপালাসহ বিলিন হয়ে যায়। সিডরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা আশার আলো মসজিদ থেকে ডিএস-৭ স্লুইস গেট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের গাইড ওয়াল ভেঙ্গে বিলিন হয়ে গেছে। বাঁধসংলগ্ন দোকানপাট সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। ভাঙন এলাকার মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন হাওলাদার বলেন, নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মাণ করায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সময় ভাঙনে বাঁধের বাইরের বিঘার পর বিঘা জমি বিলিন হয়ে গেছে। এখন মূল বাঁধে আঘাত করেছে ভাঙন। সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে শতশত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দিয়েছেন। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের আগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নদী শাসন না করে বাঁধের কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। যার ফলে ভাঙন এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমার ইউনিয়নের গাবতলা, বগী, তাফালবাড়ীসহ বলেশ্বর তীরের প্রায় ১০-১২টি পয়েন্ট ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকায় দ্রুত নদী শাসন করা না হলে এই বাঁধ শরণখোলাবাসীর কোনো কাজে আসবে না।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ভাঙন কবলিত স্থানে আজ (১৯ অক্টোবর) থেকে জিও ব্যাগে বালু ভরে ডাম্পিং কাজ শুরু হয়েছে। যতক্ষনে ভাঙ্গন রোধ করা না যাবে ততক্ষন ডাম্পিং কাজ চলবে। তবে, সিইআইপি কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত বাঁধ হস্তান্তর করেনি। বিষয়টি তাদেরকে অবহিত করা হবে।