অনেক দিন ধরেই চলছে গ্যাসের সংকট। তার পরেও বাড়ছে না গ্যাস উৎপাদন। অথচ বাড়ছে গ্যাসভিত্তিক শিল্পণ্ডকারখানা ও গ্যাসচালিত যানবাহনের সংখ্যা। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ঘাটতি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে রাজধানীতে দিনের বেলায় জ্বলছে না রান্নার চুলা। কয়েক দিন আগেও সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যেত। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ভোর ৫টার পরই গ্যাসের চাপ কমে যায়। যে চাপ থাকে, তাতে চুলা নিবু নিবু করে জ্বলে, রান্না করা যায় না। বর্তমানে শুধু রান্নার চুলা নয়, গাস সংকট চলছে সিএনজি পাম্পেও। গ্যাসের জন্য পাম্পগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশাল লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যাচ্ছে সেখানে। রাস্তা জুড়ে যানবাহনের এই লাইনের কারণে পুরো নগর জুড়ে দেখা দিয়েছে অসহনীয় যানজট। রাজধানীর অনেক এলাকায় এখন পাইপলাইনের গ্যাসের পাশাপাশি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন গ্রাহকরা। এতে পরিবারের খরচ বেড়ে চলছে। একদিকে দিতে হচ্ছে গ্যাস বিল অপরদিকে সিলিন্ডার খরচ। এই অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত গ্যাস চাহিদা মেটাতে না পারায় বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হচ্ছে। এতেও গ্যাসের চাহিদা মিটছে না। দেশে দৈনিক চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে দুই হাজার ৬৯১ মিলিয়ন ঘনফুট। গত মাসে দৈনিক সরবরাহ ছিল দুই হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আগের মাসে ছিল প্রায় তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ সরবরাহ ক্রমেই কমছে এবং সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। এ ছাড়া মারাত্নক গ্যাসসংকটের কারণে স্বাভাবিক সময়ের মতো কারখানা চালানো যাচ্ছে না, কমছে শিল্পের উৎপাদন। রাজধানীবাসীর এ দুর্ভোগ যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। প্রতি বছরই শীতের শুরুতে গ্যাস সংকট শুরু হয়, চলে শীতজুড়ে। তবে সমস্যা যা-ই হোক, আমরা মনে করি এর সমাধান প্রয়োজন। মানুষের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত গ্যাস সংকট দূর করা হোক। যেহেতু গ্যাসের সহজলভ্যতা একটি দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করে, আবার গ্যাসের স্বল্পতা একটি দেশের অর্থনীতিকে গতিহীন করে। তাই দেশের অর্থনীতির বিকাশ এবং গ্যাসের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠা এ অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে দেশে গ্যাসের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশকে উন্নয়ন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে হবে।