তারাগঞ্জ কেন্দ্রীয় মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত

এফএনএস (প্রিয় তুল্লা সুমন; তারাগঞ্জ, রংপুর) : : | প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর, ২০২৩, ০৬:২৭ এএম : | আপডেট: ২৬ অক্টোবর, ২০২৩, ০৬:০৯ এএম

রংপুরের তারাগঞ্জ কেন্দ্রীয় মন্দিরে রংপুর-২ (তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্যের ঘোষণাকৃত বরাদ্দ ও সাংসদের নির্দেশে অনুষ্ঠিত কালীপূজার মেলার জন্য বরাদ্দের টাকা না পাওয়ায় মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানের পর প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ করে তারাগঞ্জ কেন্দ্রীয় মন্দিরের নেতৃবৃন্দ। পরে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের হস্তক্ষেপে ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সন্ধ্যার পর প্রতিমা বিসর্জন শেষ হয়।
খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরে গিয়ে জানা যায়, শারদীয় দুর্গোৎসব ২০২২ সালে তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন দুর্গা মন্দিরের ন্যায় তারাগঞ্জ কেন্দ্রীয় মন্দিরে এসেও রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল হক চৌধুরী ওরফে ডিউক চৌধুরী প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন প্রতিটি মন্ডপের উন্নয়ন কাজের জন্য নগদ ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিবেন। শারদীয় দুর্গোৎসবের কয়েকদিন পর এমপির পরামর্শে কালীপূজার আয়োজন করে কয়েকদিন মেলা পরিচালনা করা হয়। ওই আয়োজনের ৮৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে পেয়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরের নেতৃবৃন্দ সেসময় ওই কালীপূজা ও মেলার আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু গত এক বছরে একাধিকবার এমপির কাছে গেলেও ঘোষণাকৃত বরাদ্দের এক লক্ষ টাকা ও কালীপূজার মেলা আয়োজনের ৮৫ হাজার টাকা পায়নি আয়োজকেরা। এতে আয়োজকদের সাথে স্থানীয়দের ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী এমপির ওই দুইটি বরাদ্দের টাকার হিসেব চাইলে আয়োজকেরা জানায় এমপি কোন টাকা দেয়নি তাদের। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মাঝে চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হলে এবছরের শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে এমপির ওই দুই বরাদ্দের টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় মন্দিরের নেতৃবৃন্দ। খবর পেয়ে ওই মন্দিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আশরাফ আলী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রুবেল রানা, তারাগঞ্জ থানার ওসি আবদুল লতিফ মিয়া (পিপিএম), হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ, কুর্শা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আফজালুল হক সরকারসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ওই মন্দিরে ছুটে গেলেও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। পরে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি, জাসদ নেতা ও হাড়িয়ারকুঠি ইউপির চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান কুমারেশ রায়ের নেতৃত্বে উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের হস্তক্ষেপে প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় মন্দিরের পুজা কমিটির নেতৃবৃন্দ। এ সময় নেতৃবৃন্দের চাপে এমপির ওই দুইটি বরাদ্দের মোট ১ লক্ষ ৮র হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। খবর শুনে মন্দিরে উপস্থিত হয় তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন। তিনি সকলের উপস্থিতিতে ও মন্দিরের ভক্তবৃন্দের অনুমতিতে নগদ ৫০ হাজার টাকা ওই মন্দিরের সভাপতি উত্তম কুমারের হাতে তুলে দেন। রংপুর জেলা পরিষদের সদস্য ও তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আতিয়ার রহমান জেলা পরিষদের বরাদ্দ থেকে ওই মন্দিরের উন্নয়ন কাজের লক্ষ্যে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেন।
এবিষয়ে তারাগঞ্জ কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি উত্তম কুমার রায় বলেন, গত বছর এমপি এই মন্দিরে এসে উন্নয়ন কাজের জন্য ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এখন অবধি একটি টাকাও দেয়নি। এমনকি গত বছরের দুর্গা পুজার কয়েকদিন পরের কালী পূজা ও মেলার আয়োজন করতে বলেন এমপি মহোদয়। তিনি ওই আয়োজনের জন্য আরো ৮৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই আয়োজনের ৮৫ হাজার টাকারও একটি পয়সা দেয়নি তিনি। এদিকে আমাদের কাছে এমপির ওই টাকার হিসেব না পাওয়া পর্যন্ত এবছরের শারদীয় দুর্গা পূজার পুজার আর্থিক সহায়তা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মন্দিরের ভক্তরা। তাদের আর্থিক সহায়তা ছাড়া পূজা সম্পন্ন করা অসম্ভব। এদিকে স্থানীয়রা বিশ্বাস করতেও চাচ্ছে না যে এমপি টাকা দিতে চাইলেও এখন পর্যন্ত কোন টাকাই দেয়নি। তাই আজকের এই সিদ্ধান্ত। আমরা প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ রাখতে চাইনি। শুধু প্রতিমা বিসর্জন কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ রেখে সবাইকে জানাতে চেয়েছি এমপির টাকা পাইনি আমরা। আজ যদি আমরা প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ রাখার এই কাজটি না করতাম তাহলে এলাকার মানুষদের কোন ভাবেই বিশ্বাস করাতে পারতাম না যে এমপি কোন টাকা দেয়নি। আর এমপির অনুসারী নেতারাও এগিয়ে আসতো না প্রশাসনও বিষয়টি জানতো না। এখন ওনারাও বিষয়টি গুরুত্ব দিবেন আশা রাখি। 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW