নওগাঁর মহাদেবপুরে এবার অসংখ্য পুকুরে পানিফলের চাষ করা হয়েছে। আগাম জাতের পানিফল বা সিঙ্গারা ইতোমধ্যেই বাজারে উঠেছে। মৌসুমের শুরুতে এবার পানিফলের ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। নিয়মিত চাষিদের পাশাপাশি অনেকেই এখন এই অর্থকরী ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। উপজেলার আত্রাই নদীর নতুন ব্রিজ পার হয়ে মহাদেবপুর-পোরশা পাকা সড়কের বাটুলতলীর উত্তরে খাজুর ইউনিয়নের কুঞ্জবন এলাকায় দেখা গেল একটি ডোবা ভর্তি পানিফলের গাছ। পাতায় পাতায় ছেয়ে গেছে পুরো ডোবা। কাদা পানি ভেঙ্গে কাছে যেতেই চোখে পড়লো মাজা পানিতে নেমে বড় মাটির চাড়িতে গাছ থেকে পানিফল তুলছেন একজন মধ্যবয়সী। আলাপ করতে চাইলে মাঝডোবা থেকে পাড়ের কাছাকাছি এলেন তিনি। নাম তার শ্রী যোগেশ চন্দ্র বর্ম্মণ। ডোবার পাশেই বাড়ি তার। তিন বিঘা আয়তনের এই ডোবার মালিক কয়েকজন। তাদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে পানিফলের চাষ করেন তিনি। বর্ষা মৌসুমে ডোবা ভর্তি পানি থাকে। খড়ায় শুকিয়ে যায়। তখন বোরো ধান হয়। বোরো কাটার পর থেকেই পানিফল চাষের প্রস্তুতি নেন তিনি। চাষি যোগেশ চন্দ্র বর্ম্মণ জানালেন, পানিফল চাষে তিনি খুবই অভিজ্ঞ। গত ৪০ বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় পানিফলের চাষ করে আসছেন। গত তিন বছর থেকে করছেন এই ডোবায়। এ ফল চাষে সারাবছর কাজ করতে হয়। এই তিন বিঘার জন্য মাঘ-ফাল্গুন মাসে সোয়া কেজি পানিফল একটি বড় চাড়িতে ডুবিয়ে রাখেন। অল্পদিনেই সেখান থেকে অঙ্কুরোদম হয়। বৈশাখ মাসে ডোবায় লাগানো ধানের লারা, আগাছা ও জঙ্গল পরিস্কার করে রাখেন। বর্ষা শুরু হলে ডোবায় পানি জমে। তখন অঙ্কুরিত চারাগাছ রোপণ করেন। দুমাসের মধ্যে গাছ বড় হয়ে পাতায় পাতায় ছেয়ে যায় পুরো ডোবা। এরমধ্যে কয়েক বার কীটনাশক ছিটাতে হয়। দুধরনের পোকা পাতা ও ফুল খেয়ে ফেলে। এ ছাড়া পানিতে জন্মানো শ্যাওলা পরিস্কার করতে হয় প্রায় প্রতিদিন। তিনি আগাছা পরিস্কারের কাজ করেন। আর ফল তুলতে সহযোগিতা করেন তার ছেলে চঞ্চল চন্দ্র বর্ম্মণ। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই ফল ওঠে। দুমাস ফল পাওয়া যায়। এখন প্রতিদিন ৩০ কেজি করে পানিফল তুলছেন। বাজারে প্রতিকেজি ৬০ টাকা করে বিক্রি হলেও পাইকাররা তার কাছ থেকে নিয়ে যায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। তিন বিঘা ডোবায় পানিফল চাষে তার খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। আর দুমাসে বিক্রি হয় কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার ফল। এ থেকে তাদের দুজনের সংসার চলে যায় ভালভাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ জানালেন, পানিফল একটি দেশীয় নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। কিন্তু এখনও এটি এখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়না। বিচ্ছিন্নভাবে অসংখ্য চাষি এলাকার ডোবা, খাল, বিল, ডাঁরা ও পুকুরে এর চাষ করে থাকেন। এদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সবরকম সহযোগিতা করা হয়। তবে এই ফল চাষে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।