শিক্ষকসহ সার্বিক জনবল সংকটে ভুগছে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। মেডিকেল কলেজগুলোয় শিক্ষক সংকট একদমই নতুন কিছু নয়। গত এক দশক ধরে আমরা দেখছি শিক্ষক সংকট থেকেই যাচ্ছে। দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এমবিবিএস কোর্সের শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এরপরেও দেশের মেডিকেল কলেজগুলোয় আসন সংখ্যা আরও ১ হাজার ৩০টি বাড়ানো হয়েছে। ৮ কোটি মানুষের এই দেশে স্বাস্থ্য পরিচর্যায় যে আরও অনেক চিকিৎসক দরকার তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর আসন সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজগুলোতে এমনিতেই শিক্ষকসহ সার্বিক জনবল সংকট ও অবকাঠামোগত সংকটও প্রকট এবং আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ও ল্যাব সুবিধায়ও রয়েছে ঘাটতি। এ প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান সমস্যার সমাধানের দিকে না গিয়ে আসন সংখ্যা রাতারাতি ২৪ শতাংশ বাড়ানো ঠিক হয়নি। বর্তমানে আসন সংখ্যা না বাড়িয়ে, মানসম্মত চিকিৎসা শিক্ষার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত যৌক্তিকভাবে নিশ্চিত করা ও শিক্ষার্থীদের সর্বাধুনিক শিখনপদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ক্লাস, পরীক্ষাগার ও হাসপাতালে প্রশিক্ষিত করা বেশি জরুরি। কেননা- সরকার গত দেড় দশকে ২০টি নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু নতুন শিক্ষা উপকরণ বাড়ানো হয়নি। এমন অনেক মেডিকেল কলেজ রয়েছে যাদের নিজস্ব অ্যাকাডেমিক ভবনই নেই। নিজস্ব হাসপাতাল নেই। এসব মেডিকেল কলেজে রয়েছে পরীক্ষাগার, গবেষণাগার, গ্রন্থাগার, যোগ্য শিক্ষক ও লোকবলের অভাব। এসব সমস্যার সমাধান না করে কলেজগুলোর আসন সংখ্যা যত বাড়ানো হবে চিকিৎসা শিক্ষার মানও তত নিম্নগামী হবে। এ ধারা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে হুমকিতে পড়বে দেশের চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য খাত। দেশে যোগ্য চিকিৎসক ও অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। যেনতেন ব্যবস্থায় কোনো সুফল অর্জিত হবে না। বরং এসব ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ঘাটতি নিয়েই শিক্ষার্থীদের এমবিবিএস কোর্স শেষ করতে হবে। যদিও শিক্ষক সংকট নিরসনে আমরা এখনো কোন কার্যকরী পদক্ষেপ দেখছি না। তবে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের মেডিকেল শিক্ষার মান তোহ বাড়বেই না, আরও কমতে থাকবে। তাই দ্রুত শিক্ষক সংকট নিরসন করে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়ন করার পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হবে।