বাংলাদেশে সড়কপথের মতো রেলপথেও জীবনহানিকর দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। মৃত্যুহার কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে রেললাইনের ত্রুটি বা রেলক্রসিংয়ে ট্রেনচালক ও রেলকর্মীদের গাফিলতিতে। সম্প্রতি ২৩ অক্টোবর বিকালে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনাসহ বাংলাদেশ রেলওয়ে ইনফরমেশান বুক ২০১৮ থেকে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ এবং ২০১৭-১৮ এই দশ বছরে মোট ২ হাজার ৪২৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা ২ হাজার ১৫৫ টি যা মোট দুর্ঘটনার ৮৯ শতাংশ। ট্রেন লাইন চ্যুত হয়ে দুর্ঘটনার পেছনে যেসব কারণ দায়ী তার মধ্যে রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ রেলপথ, ইঞ্জিন বা বগির যান্ত্রিক সমস্যা, সিগনাল ব্যবস্থার সমস্যা, বিভিন্ন ধরণের মানবীয় ভুল ও নিয়ম অমান্য করা ইত্যাদি। তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় সর্বোচ্চ। ক্ষমতাসীন সরকার ১৪ বছরে রেলের উন্নয়নে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু উচ্চব্যয়ে রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নিতে যতটা উৎসাহ দেখা যায়, ততটাই নিরুৎসাহ বিদ্যমান রেলপথ ও রেলসেতু সংস্কারে। ফলে সারা দেশে মানসম্পন্ন রেললাইন রয়েছে ৭৩৯ কিলোমিটার, যা মোট রেললাইনের মাত্র ২৫.২৩ শতাংশ। রেলসেতু ঝুঁকিপূর্ণ ৪০২টি। লাইনে পাথরস্বল্পতা, রেলক্লিপ ও নাট-বল্টু চুরি হয়ে যাওয়ায় নড়বড়ে ট্র্যাক মেরামতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও যন্ত্রাংশের অভাবে রেললাইনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথের পাশাপাশি ২৭৮ ইঞ্জিনের মধ্যে ১৯৫টির এবং ১ হাজার ৬৫৬টি কোচের মধ্যে ৯০০টির আয়ু শেষ। এগুলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও সঠিক ভাবে করা হয়না। রেলের পূর্বাঞ্চলে ২০ শতাংশ বগি বার্ষিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মেরামত ছাড়াই চলছে। লোকবলের অভাব এবং বগির স্বল্পতার কারণে এই কাজ হচ্ছে না। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলে মিটারগেজের ১২ শতাংশ এবং ব্রডগেজের ৮ শতাংশ বগি সময়মতো মেরামত হয়না। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছালে এর ইঞ্জিন ও বগি ৪৫ মিনিট ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নিয়ম। কিন্তু এই কাজে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ ছাড়া তিন মাস পরপর মেরামত কারখানায় নিয়ে বগির দিনব্যাপী পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিয়ম আছে। এক বছর পর কারখানায় নিয়ে বড় ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মেরামতের কথা। এসবের জন্য বরাদ্দও আছে। কিন্তু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজটাই ঠিকভাবে হয় না। ফলে রেলপথের দুর্ঘটনা কমাতে হলে এর যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। যাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে দুর্ঘটনার হার বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।