ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ‘ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩’ প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এ সময় ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য বিভাগ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছে অবাধে মা ইলিশ শিকার। মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা থাকলেও কিছু অসাধু ব্যক্তির অতিমাত্রার লোভের কারণে গত কয়েক বছর যাবত এই পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে দিনের বেলা প্রশাসনের নজরদারি থাকায় রাতের বেলা পদ্মা ও যমুনা নদীতে নামছেন জেলেরা। নদীর তীরে হাট বসিয়ে বা গ্রামে ফেরি করে সেই ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২২ দিন ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কিছুতেই মানছে না জেলেরা। ৭০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০-৯০০ টাকা কেজি দরে, ছোট ইলিশ ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে। এবং ১ থেকে দেড়কেজি ওজনের ইলিশ ১২০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এসব তীরবর্তী বাজারে। মূলত শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলা, বরিশাল জেলার হিজলা ও মুলাদী উপজেলার সীমান্তবর্তী মেঘনা ও তার শাখানদী এবং কীর্তনখোলা নদী মিলিয়ে ৩১৮ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ২০১৯ সালে দেশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেবে গেজেটভুক্ত করে। এসব এলাকায় ইলিশ শিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায়, বিপাকে পড়ছে দেশের কয়েক লক্ষ জেলে। ফলে এসব জেলেরা আইন অমান্য করে দেদারে ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে। সরকারি হিসেব মোতাবেক মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা দেশের ৩৬টি জেলার ১৫২টি উপজেলার ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৪২টি জেলে পরিবারের জন্য চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম শুরুর আগেই এসব পরিবার ২৫ কেজি হারে চাল বরাদ্দ পাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জেলেরা পাঁচ্ছেন ১৮ থেকে ২০ কেজি চাল। যা দিয়ে জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়ছে তাদের জন্য। আবার অনেক অনিবন্ধিত জেলারা এই চাল পাঁচ্ছেনা ফলে জেলেরা নিরুপায় হয়ে জড়িয়ে পড়ছে ইলিশ শিকারে। তাই ইলিশ রক্ষা ও জেলেদের বাচাতে সরকারকে এখনি কার্যকরী ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। অভয়াশ্রম হিসেবে গেজেটভুক্ত স্থানগুলোতে দিনের পাশাপাশি রাতেও পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের নজরদারি বাড়াতে হবে। যেসব জেলেরা ইলিশ শিকারে জড়িত থাকবে তাদের নিষেধাজ্ঞার শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত নজরদারিতে রাখতে হবে। মা ইলিশ রক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপের কঠোর হস্তে সফল বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব জেলেরা নিবন্ধিত নয় তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। ২৫ কেজি হারে চাল একটি পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত নয় তাই এই বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আবার দেখা যায় অনেক সময় মা ইলিশ শিকার করতে ভারতীয় জেলেরা দেশের সীমান্তে ঢুকে পড়ে তাই এসব ভারতীয় জেলেরা যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেইদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে মা ইলিশ রক্ষা করতে হবে যে কোন মূল্যে। আর এই মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল করতে পারলে দেশের যেমন ইলিশের চাহিদা মিটবে তেমনি বিদেশে ইলিশ রপ্তানির পরিমাণও বাড়বে আসবে বৈদেশিক মুদ্রা।