৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট নিক্ষেপের মাধ্যমে শুরু হয় এই যুদ্ধ। তার জবাবে ইসরাইলও গাজা উপত্যকাকে লক্ষ করে রকেট নিক্ষেপণ শুরু করে। এই হামলা-পালটা হামলা নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে এনেছে গাজায়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে ক্রমাগত গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে হামাসের বিভিন্ন স্থাপনায়। হামাসও পাল্টা গোলাবর্ষণ করছে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে। এই যুদ্ধ শুধু ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের ভেতরেই সীমাবদ্ধ না থেকে বিরোধের হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে। ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যে অটোমানদের অধীনে থাকা একটা এলাকা, যা মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র ভূমি। বরাবরই ফিলিস্তিন ইসলাম খ্রিষ্টান ও ইহুদি এই ধর্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তাই এই স্থান নিয়ে কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পতন হলে ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্রিটেন। ফিলিস্তিনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল আরব মুসলিমরা আর অল্পসংখ্যক ছিল ইহুদি। কিন্তু তখন ইহুদি-মুসলিমদের মধ্যে কোনো ধরনের বৈরিতার ছাপ ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর তা ধীরেধীরে সংঘাতে রূপ নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, প্রায় ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ চলমান। গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র ও স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গাজা উপত্যকা থেকে প্রথমবারের মতো ইসরাইলে আক্রমণ করে। ইসরাইলও গাজায় পাল্টা আক্রমণ করে। টানা এক সপ্তাহের এই যুদ্ধে হামাসের হামলায় ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০। ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৯০০ মানুষ। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৮৮ জন। তবে যুদ্ধ কখনোই কোনো সমাধান হতে পারে না। সহনশীলতা, মানবিকতা এবং আলোচনার মধ্য দিয়েই এই যুদ্ধ বন্ধ করার কৌশল গ্রহণ করতে হবে। চলমান হামাস-ইসরাইল সহিংস পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা হামাস-ইসরাইল সংঘাত অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের পাশে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা অনেক দেশ। অপরদিকে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তুরস্ক, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত ও লেবাননসহ বেশ কিছু আরব দেশ। ইসরাইলি দখলদারিত্বের অধীনে বসবাস ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন এ অঞ্চলে কখনই শান্তি আনতে পারবে না। এখনি যদি এই যুদ্ধ থামানো না যায় তাহলে বলা যায় এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ হতে চলছে। যা সবার জন্য উদ্বেগজনক। আর এই যুদ্ধে যে পক্ষই জয়ী হোক না কেন প্রকৃত পক্ষে কোনো দলই জয়ী নয়, এটা মানবজাতির অবক্ষয়। বর্তমান পৃথিবীতে চলমান এই যুদ্ধক্ষেত্রগুলোই আগামীর পৃথিবীতে ভয়াবহ এক সমস্যা সৃষ্টি করবে, যার বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামে আরেকটা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করতে হবে। স্রষ্টা মানুষকে দিয়েছেন বিবেক, বুদ্ধি, জ্ঞান ও চিন্তার স্বাধীনতা। শান্তিময় জীবন যাপনের জন্য মানুষের মাঝে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য এবং মানবিকতা প্রয়োজন। তাহলে সমাজে, রাষ্ট্রে এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। সুতরাং শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপনে যুদ্ধ কখনোই কারো কাম্য হতে পারে না।