বিএনপি-জামায়াতের ডাকা রোববার সকাল-সন্ধ্যার হরতাল এবং গত শনিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯০০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ২১টি জেলা থেকে ৯০০ জনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
রংপুর
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্যসচিব মাহফুজ উন নবী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে রাব্বীসহ ১৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে তাঁদের আটক করা হয়। মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, সকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁদের আটক করা হয়েছে। দিনাজপুর
দিনাজপুরে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৮ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট ও হাকিমপুর-এই চার উপজেলা থেকে ২৭ জনকে আট করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল আছেন। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জেলা কালেক্টরেট স্কুলের সামনে থেকে তাঁকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ। বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার বলেন, বিরামপুর শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির ১১ জন ও জামায়াতের ১ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। পরে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। পিরোজপুর
পিরোজপুরে গত শনিবার থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ৪১ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। দলীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর সদর উপজেলার ২০, নাজিরপুর উপজেলার ৪, ইন্দুরকানি উপজেলায় ৪, নেছারাবাদ উপজেলার ৫, কাউখালী উপজেলার ২, ভান্ডারিয়া উপজেলার ১ ও মঠবাড়িয়া উপজেলায় ৫ জনকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা নাশকতায় জড়িত বলে জানিয়েছেন পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোস্তাফিজুর রহমান। পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদস্য সরদার কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের পুলিশ আটক করে পুরোনো মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে।’
নোয়াখালী
নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৮৪ জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গত শনিবার রাতে তাঁদের আটক করা হয়। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৮৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে গতকাল হরতালে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল সকালে জেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, গত শনিবার রাতে পুলিশ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন পাটোয়ারী, সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক খোকন চৌধুরীসহ অনেক নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। আটক নেতা-কর্মীদের মধ্যে আরও আছেন কোম্পানীগঞ্জ পৌরসভা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক, সুবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম, নোয়াখালী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. সুজন ও সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নিজাম উদ্দিন।
রাজশাহী
রাজশাহীতে হরতালে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে গত শনিবার রাতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১২৭ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে রাজশাহী মহানগর এলাকার ৭০ ও রাজশাহী জেলার ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, হরতালের সমর্থনে নাশকতার পরিকল্পনার জন্য বৈঠককালে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলেছে। মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, হরতাল ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৭০ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
বগুড়া
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের তিন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গত শনিবার রাতে উপজেলার কুসুম্বি ও সুঘাট ইউনিয়নের পৃথক দুটি স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। শেরপুর থানার উপরিদর্শক (এসআই) সাঈফ আহমেদ বলেন, আটক তিনজনই স্থানীয়ভাবে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিবসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৭০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় হরতাল সমর্থনে পিকেটিং করার অভিযোগে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবীসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁদের আটক করা হয়। গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবীসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। শহরে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হরতালের সমর্থনে মিছিল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। সকাল সাতটার দিকে মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় হরতাল সমর্থনে মিছিল বের করলে তাঁদের আটক করে পুলিশ। আটক ইকবাল হোসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, হরতালে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামতে দিচ্ছে না পুলিশ। তাঁদের ওপর গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছে। সকালে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মুক্তির দাবি করেছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও ভাঙচুরের চেষ্টা করলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে হরতাল সফল করার জন্য নাশকতা সৃষ্টি ও সরকার উৎখাতের জন্য গোপন বৈঠকের অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ১৭ আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে এজাহারনামীয় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শ্যামনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, গতকাল (শনিবার) রাতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা হরতাল সফল ও সরকার উৎখাতের জন্য এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। এমন খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে আটক করা হয়। পরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, নাশকতার পরিকল্পনা ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জানমালের ক্ষতি করতে পারেন-এমন ৩৮ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ আটক করেছে।
চাঁদপুর
হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করার সময় চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দু-এক জায়গায় হরতালকারীরা একটু পিকেটিং করার চেষ্টা করলে আমরা গিয়ে তা স্বাভাবিক করি। এ সময় আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩ জনকে আটক করি।’
ঝিনাইদহ
হরতাল ঘরে গত শনিবার রাতে ঝিনাইদহ সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি ও জামায়াতের ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ প্রস্তুত আছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।
জয়পুরহাট
জেলাজুড়ে বিএনপি-জামায়াতের ৪৬ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৪১ জন বিএনপির এবং ৫ জন জামায়াতের নেতা-কর্মী বলে জেলা পুলিশ জানিয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে জয়পুরহাট সদর থানার ২৫ জন, কালাই থানার ৩ জন, পাঁচবিবি থানার ৬ জন, ক্ষেতলাল থানার ৫ জন ও আক্কেলপুর থানার ৭ জন।
সুনামগঞ্জ
হরতালে পিকেটিংকালে বিএনপির ছয় নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ডের আশপাশে পিকেটিং শুরু করেন। সকাল সাতটার দিকে স্টেশন রোডে একটি পিকআপ ভাঙচুর করা হয়। তবে পুলিশ বারবার বিএনপির নেতা-কর্মীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ছয়জনকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জামালপুর
জামালপুরে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৬৮ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে সদরে ২৮ জন, সরিষাবাড়িতে ১০, মেলান্দহে ৫, মাদারগঞ্জে ২, ইসলামপুরে ৭, দেওয়ানগঞ্জে ৮ ও বকশীগঞ্জে ৮ জন। জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. সোহেল মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তাঁদের অনেকের নামে আগেই নাশকতার মামলা ছিল এবং তদন্তে অনেকের নাম আসছে।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ১৪৭ নেতা-কর্মীকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সামিউল আলম। তিনি বলেন, তাঁদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। এ ছাড়া কিছু অপরাধীকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তিকে ধরার সুযোগ নেই।
বরগুনা
জেলা বিএনপির নেতা এ জেড এম সালেহ ফারুক দাবি করেছেন, গত শনিবার ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ থেকে ফেরার পথে তাঁদের ১০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া আরও আটজনকে আটক করা হয়েছে। তবে জেলার পুলিশ সুপার আবদুস ছালাম বলেছেন, বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
ঝালকাঠি
ঝালকাঠিতে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালকে কেন্দ্র করে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিভিন্ন স্থান থেকে ১৫ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জেলার রাজাপুরে ৬, নলছিটিতে ৫, কাঠালিয়ায় ৪ জনসহ বিএনপির মোট ১৫ নেতা-কর্মীকে গত শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে আটক করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা হবে।
নওগাঁ
বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১১৪ নেতা-কর্মীকে আটকের দাবি করেছে দলটি। তাঁদের মধ্যে নওগাঁ সদরে ১১, নিয়ামতপুরে ১৩, মান্দায় ৯, মহাদেবপুরে ৮, বদলগাছি ১১, সাপাহারে ১৭, পোরশায় ১০, ধামইরহাটে ৮, পত্নীতলায় ৮, আত্রাইয়ে ১১ ও রানীনগর উপজেলায় ৮ জন আছেন। নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন বলেন, হরতাল বানচাল করতে এবং বিএনপির কর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে। ১১৪ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটকের পর পুরোনো গায়েবি মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মামলার বেশ কয়েক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর আসামিদের আদালতে নেওয়া হয় এবং পরে আদালতের নির্দেশে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।