ভারতের কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে হাঁটুর চিকিৎসার নামে প্রতারণার শিকার হয়ে এক বাংলাদেশী সাংবাদিক বর্তমানে পঙ্গুত্ব বরণের উপক্রম হয়েছেন। ওই সিনিয়র সাংবাদিকের নাম কাজী গিয়াস। তিনি ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ ছাড়াও বাংলাদেশের অনেক পত্রিকায় কাজ করেছেন। তিনি রাজশাহীর শহরের বাসিন্দা। এমন ভুল চিকিৎসার বিষয়টি জানার পর সাংবাদিক সমাজসহ সর্বস্তরের শুরু হয়েছে সমালোচনা। জানা গেছে, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে কলকাতার হাওড়া জেলায় অবস্থিত নারায়ণা সুপার স্পেশালিস্ট হাসপাতালে যায়। সেখানে অর্থপেডিক ডাক্তার ভিভেক শর্মার সাথে ওই সাংবাদিক তার চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপারে আলোচনাকালে তাকে বলেন, হাটুর 'নী' বদলানো কথা। তখন কোন দেশের 'নী' বেশিদিন টিকবে জিজ্ঞাসার উত্তরে ডাক্তার শর্মা রোগীকে জানান, দাম বেশি হলেও মানসম্মতভাবে তৈরি ইউ.এস (আমেরিকা) এর লাগাতে হবে। তাহলে দীর্ঘস্থায়ী হবে। যেটি ক্রয় করতে ভারতীয় মুদ্রায় তিন লক্ষ রুপি লাগবে। ওই মুদ্রায় ক্রয় করে লাগাতে চাইলে অফিস অর্ডারের কথা জানান রোগী বাংলাদেশের সিনিয়র সাংবাদিক কাজী গিয়াস। কিন্তু চিকিৎসক শর্মা অফিস অর্ডার প্রয়োজন নেই বলে ভিকটিমকে জানান। এরপর সেই রুপি প্রদান করেন সাংবাদিক কাজী গিয়াস। এর দুদিন পর ভিকটিমের বাম পায়ের অপারেশন করা হয়। অপারেশনের একদিন পর জ্ঞান ফিরলে ভিকটিম সাংবাদিক দেখতে পায় তার পাশে রাখা একটি টেবিলে 'নী'-এর প্যাকেট রয়েছে যা মেড ইন বেলজিয়াম। তখন বিষয়টি ডাক্তার শর্মার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সমস্যা নাই এটাও বেশিদিন টিকবে। তখন কতদিন টিকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ থেকে ২০ বছর তো অবশ্যই। সেখান থেকে সাংবাদিক কাজে গিয়াস বাংলাদেশ ফিরে কিন্তু বেলজিয়ামেরটা লাগানোর কারণে এর প্রভাবটা মাত্র চার বছরে বুঝতে পারেন। অর্থাৎ এই চার বছরের মধ্যেই সেটি নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণেই দেশের এই সিনিয়র সাংবাদিকের হাঁটাচলা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে লাঠি ছাড়া কোনক্রমে চলাচল করতে পারে না। এরপর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে একজন সেবক সঙ্গে নিয়ে কলকাতার হাওড়া জেলায় অবস্থিত সেই হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার শর্মার সাথে দেখা করে ভিকটিমের দুরবস্থার কথা জানান। এরপর ডাক্তার শর্মা ভিকটিম রোগীকে তার ডান পায়ের হাঁটুতেও নতুন একটি 'নী' লাগানোর পরামর্শ দেন। তখন তার কথায় সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পডড়েন। কারণ, ইতঃপূর্বে অপারেশন করা হয়েছে বাম পায়ের অথচ চিকিৎসক বলছেন এবার ডান পায়ের অপারেশন করে 'নী' লাগাতে হবে। এরপর অনেক আলাপচারিতার একপর্যায়ে ভিকিটিম রোগীকে একটি প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেন সেই চিকিৎসক। এরপর জানান ভাগ্য তো আমার হাতে নয়, ফলে আমার করার কিছুই নাই। যদি থাকত তাহলে আপনার জন্য চেষ্টা করতাম। এরপর সিনিয়র এই সাংবাদিক দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি প্রায় পঙ্গুত্ব বরণ করে বাসায় অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের সহকর্মী ছাড়াও আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতরা ওই ঘটনার বর্ণনা তার কাছ থেকে শুনে সেই কলকাতার নামধারী স্বনামধন্য চিকিৎসক বিবেক শর্মার প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিকটিম সাংবাদিক কাজী গিয়াস সেই হাসপাতাল বা ওই হাসপাতালের নামধারী সেই চিকিৎসক শর্মার কাছে প্রতারিত না হওয়ার জন্য সকলকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে ইতিমধ্যেই সিনিয়র এই সাংবাদিক তার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালানায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করায় বর্তমানে চিকিৎসার ধারাবাহিকতা পরিচালন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।