কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে জমি সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে আগাছানাশক ছিটিয়ে দুই একর জমির ধান পুড়িয়ে বিনষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে নাগেশ্বরী থানাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক। অভিযোগে জানা যায় উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের এরশাদুল হক ও রাশেদুজামান মানিক গং এর সাথে পৌরসভার রবিউল ইসলাম চৌধুরী ও আজিজার রহমান চৌধুরী গং এর দীর্ঘদিন যাবত জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম আদালতে মামলা চলমান থাকলেও আজিজার রহমান চৌধুরীর পক্ষে দৃস্কৃতিকারী মিজানুর রহমান ও তার ভাইসহ পরিবারের লোকজন রাশেদুজাজামান মানিক ও এরশাদুল আলমের পরিবারের বিভিন্ন সময় নানাভাবে ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। এর প্রতিবাদ করলে তারা প্রাণ নাশের হুমকী প্রদান করে আসছে। একপর্যায়ে ৩১ অক্টোবর গভীর রাতে ৫০-৬০ জন লোক নিয়ে সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে আগাছানাশক ছিটিয়ে ধান ফসল পুড়িয়ে ফেলে এবং জমির কোনায় থাকা একটি ছাপড়া ঘরে ভাঙচূড় করতে থাকলে আশেপাশের বাড়ির লোকজন সোরগোল শুনে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। পরে গ্রামের লোকজন জরো হতে থাকলে দৃষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়। এছাড়াও পরেরদিন দুপুরের দিকে মিজানুর রজমান ও তার লোকজন মিলে জমির কোণায় থাকা ছাপড়া ঘরের চাল, খুটি, বেড়াসহ সবকিছু খুলে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক রাশেদুজ্জামান মানিক বাদী হয়ে মিজানুর রহমানসহ ৬জনকে আসামি করে নাগেশ্বরী থানাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দুই একরের অধিক জমির ফসল চিটার মতো হয়ে আছে। ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, তাদের জমির ধানের শীষ বের হয়েছে। আর কিছুদিন গেলে ধান পাকতো। পেকে গেলে ধান কেটে ঘরে তুলতো তারা। কিন্তু ধানের সাথে শত্রুতা করে মিজানুর রহমান ও তার ভাড়া করা লোকজনসহ গভীর রাতে আমাদের ধানী ফসলে ওষুধ ছিটিয়ে ধান নষ্ট করে দিয়েছে। এখন আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতি করতে আর সমাজে হেয় করতে এর আগেও কয়েক বার একই ঘটনা ঘটিয়েছে প্রতিপক্ষরা। শুধু তাই নয়, মিজানুর ও তার পরিবারের লোকজন সবসময় আমাদেরকে রাস্তা-ঘাটে মারপিটসহ প্রাণ নাশের হুমকী দেয়। এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
স্থানীয়রা জানান, আমরা গভীর রাতে চিৎকার শুনে বের হই। পরদিন দেখি ধানগাছগুলো পেকে যাওয়ার মতো সাদা হয়ে গেছে। এর আগেও অনেকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে খাদ্যের সাথে এমন ঘৃণিত কাজ কাম্য নয়। এতে করে ঘাটদ্য ঘাটতির আসঙ্কা রয়েছে। সুজন চন্দ্র, সুনীল চন্দ্র, সুনতী বালা জানায়, জমির সাথেই আমাদের বাড়ি। রাতে সোরগোল শুনে উঠে দেখি ধানক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর ড্রাম দিয়ে জমিতে কীটনাশক ছিটাচ্ছে আর কেউ ছাপড়া ঘর বাঙচুর করছে। আমরা চিৎকার করলে গ্রামের অনেক লোক জরো হয়। পরে তারা পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় এখানে একটি ড্রাম ফেলে পালিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে মুখ খুললে বিবাদীরা আমাদের উপরও গালাগালি করে অত্যাচার করে।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে বিবাদী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন ঘটনার দিন আমরা ঘরে ছিলাম। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার শাহরিয়ার হোসেন জানান, সরেজমিনে ধান ক্ষেত পরিদর্শ করা হয়েছে। ধানক্ষেতে অতিরিক্তহারে আগাছানাশক প্রয়োগের ফলে ধান পুড়ে যেতে পারে। তবে ল্যারেটরিতে পরীক্ষা করলে এটি নিশ্চিৎ হওয়া যাবে যে কী প্রয়োগ করা হয়েছে?
নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ আশিকুর রহমান বলেন, দুই পক্ষেরই অভিযোগ পেয়েছি। দুই পক্ষেরই এক পক্ষ অন্যপক্ষকে বিষ দিয়ে ধান পোড়ানোর অভিযোগ তুলেছে। তবে বিষয়টি তদন্ত চলছে। সত্যতা যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।