ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কামালহাট গ্রামের মৃত রনজিত কুমার দাসের ছেলে উজ্জ্বল দাস পরিবারের উপার্জনের একমাত্র ভানের ব্যাটারি চুরি হবার পর হতাশ হয়ে পড়েছে। ব্যাটারি চালিত ভ্রান চালিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনভাবে বেচে থাকতো। মাত্র ২ শতাংশ জমির উপর টিনের একটি কুপড়ি ধরে সবাই বসবাস করে। কমেলা রানী বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে অভাবের সংসারের ভরসা ছিল ব্যাটারি চালিত ভ্যান। অসহায় এ ব্যাক্তির কলেজ পড়-য়া মেয়ে অর্থের অভাবে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় উজ্জ্বল দাস কোন তরকারি ছাড়া একটি প্লেটে শুধু সাদা ভাত খাচ্ছে। উজ্জ্বল দাস ৫ জনের সংসার চালাতে প্রথম দিকে অন্যের জমিতে কামলা হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তিতে তিনি পায়ে এক ব্যাক্তির চালিত ভ্যান চালানো শুর করে। দিন দিন শরীরে শক্তি সামর্থ্য কমতে থাকায় পায়ে চালিত ভ্যান গাড়ির পরিবর্তে অনেক কষ্টে ধার দেনা করে তিনি পুরাতন বডির একটি ভ্যান গাড়িতে চারটি ব্যাটারি সংযোজন করে ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালিয়ে দুমুঠো খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। রাতে চোরে নিঃস্ব উজ্জ্বল দাসের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ব্যাটারি চালিত সেই ভ্যান গাড়ির ব্যাপারি চুরি করে নিয়ে যায় অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে। রাতে ভ্যানটি চুরি করে নিয়ে ফাকা মাঠের মধ্যে নিয়ে ব্যাটারি টি খুলে নিয়ে যায়। পরের দিন সকালে ভ্যান গাড়িটি বাড়িতে না দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। পরবর্তীতে খোঁজাখুঁজির পর মাঠের মধ্যে ব্যাটারীবিহীন ভ্যানটি তিনি খুঁজে পান। ব্যাটারী না থাকায় ভ্যানটি এখন অকেজো হয়ে বাড়িতে পড়ে রয়েছে। যে কারণে এ ভ্যান তিনি চালাতে না পারায় উপার্জন করতে পারছেন না। আগে ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে থেকে ৫ শত টাকা উপার্যন করতো। বর্তমানে উজ্জ্বল দাসের আয়ের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এতটাই অভাবী উজ্জ্বল দাস যে, তার গায়ে দেবারমত একটি ভালো জামাও নেই, এমনকি পায়ে দেবার এক জোড়া স্যানডেল ও নাই। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন, সংসার চালানোর চিন্তা তার চোখে মুখে সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। ১০ টাকা কেজি চাউলের একটি কার্ড ছাড়া আর কোন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পান না। অবশ্য উজ্জ্বল দাস অন্যের সহযোগিতায় জীবন চালাতে চান না। নিজের পরিশ্রমের টাকায় সংসার চালাতেই তিনি পছন্দ করেন। বর্তমানে সংসারে আয় রোজগার না থাকায় ইতোমধ্যে কলেজ পড়-য়া একমাত্র মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলে অন্যের দোকানে থেকে যা আয় করে তাও সংসার খরচের জন্য অতি সামান্য। যে কারণে উজ্জ্বল দাসের পরিবারের সদস্যরা এখন দিন কাটাচ্ছেন অর্ধহারে অনাহারে। অসহায় উজ্জ্বল দাসের সাথে কথা বলার সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ভ্যানের ব্যাটারী চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। আমি এখন কিভাবে সংসার চালাবো ? দ্রব্য মূল্যের যে দাম ছেলের সামান্য আয় করা টাকা দিয়ে কোন রকম পরিবার নিয়ে বেচে আছি। সমাজের বৃত্তবান কোন মানুষ আমার ভ্যান গাড়ির ব্যাটারী কেনার জন্য সহযোগিতা করতেন তাহলে কর্ম করে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম। টাকার অভাবে তিন বেলা খাবার জুটাতে পারছি না ও তরকারি ও কিনতে পারছি না। বর্তমানে পরিবার নিয়ে বেচে থাকা টা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কোলা ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, উজ্জ্বল দাস আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা ও পরিশ্রমি একজন মানুষ। জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ভ্যানের ব্যাটারী চুরি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাকে সহযোগিতা করেছি। উজ্জ্বল দাস বলেছেন সমাজের বৃত্তবান ব্যক্তিরা সহযোগিতা ও ভানের ব্যাটারি কেউ কিনে দিলে পরিবার পরিজন নিয়ে দু,মুঠো খাবার খেয়ে বেচে থাকতো।