আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজারে সুদের কারবারে সর্বশান্ত হয়ে বহু মানুষ এখন পলাতক ও সর্বশ্বহারা হয়ে দিন যাপনে বাধ্য হয়েছে। আবার কেউ কেউ আত্মহত্যার মত গর্হিত কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও বুধহাটাকে সুদের কারবার থেকে থামানো সম্ভব হয়নি। সুদের জালে ধরা খেয়ে নিজের ব্যবসার অর্ধেক শেয়ার সুদ ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়েও এখন সর্বশান্ত হতে বসেছে বুধহাটার এক ব্যবসায়ী। এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (আশাশুনি ও দেবহাটা) বরাবর প্রতিকার প্রার্থনা করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। বুধহাটা গ্রামের মৃত গহর আলির পুত্র নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দৃষ্টে জানাগেছে, নজরুলের বুধহাটা বাজারে ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্যের ব্যবসা আছে। ব্যবসার প্রয়োজনে তিনি বিবাদী সুদ ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম ও একলাছুর রহমানের নিকট থেকে আড়াই লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এবং সুদ আসলে ৮ লক্ষ ৪০ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন। এরপর ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণ নেওয়ার জন্য কিছুদিনের জন্য আবার ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ না পাওয়ায় তিনি প্রতি মাসে সুদ বাদ ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা করে ১১ মাসে ১৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়েও ঋণ শোধ করতে পারেননি। তখন সুদ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় শেয়ার নিলে আর সুদের টাকা দিতে হবেনা এমন পরামর্শে তাদেরকে অর্ধেকাংশ শেয়ার করে নেয়। (সুদ ও আসল এবং কোম্পানির পাওনা নিজেদের গায়ে নিয়ে) ব্যবসায় তাদের ২০ লক্ষ টাকা মুলধন দেখিয়ে এগ্রিমেন্ট করে নেয়। কিন্তু পাওনাদারদের সব টাকা শোধ দেয়নি। ব্যবসা তারাই চালাতে থাকে। নজরুলকে প্রতিদিন এক/দেড় শত করে টাকা দেওয়া হতো। এনিয়ে গোলযোগের একপর্যায়ে তারা হিসাবে বসলে দেখা যায় ২০১৮ সালে নজরুল ৫৫,৭৭,০২২ টাকা ও ২০১৯-২০ সালে ১৭,২৪,১২২ টাকা ব্যবসায় দিয়েছেন। নজরুল পেয়েছেন ১৬,৫৩,২৩৫ টাকা। তার পাওনা রয়েছে ৫৫,৭৪,৩৮৭ টাকা। হিসাব তাদের নিজের হাতের লেখা। এ ছাড়া আইডিএলএস ব্যাংক হতে নজরুল আরও সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা ঋণ তুলে দেয়। যে টাকা দিয়ে মাইক্রো কেনা হয় এবং আয় ব্যয়ের হিসাব ব্যবসায়ীক খাতায় লেখা হয়। এখন তারা অস্বীকার করছে কিন্তু নজরুলকে মারপিট ও হুমকী ধামকী দিয়ে এলাকা ছাড়ার পর্যায় করেছে। এ ব্যাপারে প্রতিকার প্রার্থনা করে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বুধহাটা বাজার ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় সুদের কারবার গোপনে গোপনে ব্যাপক ভাবে বেড়ে গেছে। পুলিশ ইতঃপূর্বে সুদি কারবার প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহন করলে সাময়িক ভাবে সুদি কারবার থেমে গেলেও পরবর্তীতে আবারও শুরু হয়েছে। নানা কারণে বাধ্য হয়ে মানুষকে চড়া সুদে টাকা নিতে হয়। সুদের টাকা গুনতে গুনতে একসময় ঋণ গ্রহিতারা সর্বহারা হয়ে যায়। প্রায় দুই মাস আগে সুদ ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে বাজারের ডাঃ গোলাম মোস্তফা এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানাগেছে। এ ব্যাপারে সুদের কারবার পরিচালনাকারীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বুধহাটা ইউপি সদস্য ফিরোজ আহমেদ বলেন, বুধহাটা এলাকার সুদের ব্যবসার কারণে অনেকে এলাকা ছেড়েছে। বর্তমান করিম মার্কেটের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম খোকন সুদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোলাম মোস্তফা নামক জনৈক ব্যক্তি সুদের কারণে এলাকা ছেড়েছেন। তিনি সুদ নির্মূল করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।