রংপুরে শুরু হয়েছে আট দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে রংপুর নাট্যকেন্দ্র এ উৎসবের আয়োজন করেছে। গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা প্রধান অতিথি হিসেবে এ নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নাট্যজন তুহিন শুভ ম-ল, রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আবদুল মান্নান, রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ- ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আকবর আলী। রংপুর নাট্যকেন্দ্রের সভাপতি মাহবুবুল আলম খানের সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক মুরাদ।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রংপুর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অনেক সমৃদ্ধ। উত্তরের সংস্কৃতি উর্বর জেলা রংপুর। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি নাট্যচর্চাতেও রংপুর বেশি এগিয়ে। নাট্যকেন্দ্র দেশ ও দেশের বাইরে বহুবার বিভিন্ন উৎসবে অংশ নিয়ে রংপুর তথা বাংলাদেশের সুনাম বয়ে এনেছে। আমাদেরকে এ অঞ্চলের শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের পৃষ্টপোষকতা বাড়ানো দরকার।
তিনি আরও বলেন, নাটকের মাধ্যমে সমাজের যেমন অসঙ্গতির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে, তেমনি সচেতনতার বার্তাও মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে, তা থেকে আমাদের প্রজন্মকে বাঁচাতে হবে। সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোই অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা আমাদের সংবিধানের চেতনাকে ধারণ করে।
নাট্যজন তুহিন শুভ ম-ল বলেন, সমাজে আমরা যা দেখি তার প্রতিচ্ছবি নাটকে দেখা যায়। শিল্পীরা তাদের অভিনয়ের মাধ্যমে আমাদের সমাজের অসঙ্গি, সমস্যা, সম্ভাবনা ও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন। নাট্যকর্মীরা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের সমৃদ্ধির জন্য লড়ছেন। অনিয়ম, দুর্নীতি, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নাটকের ভাষা অনেক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে আসছে। গেল দুই যুগ ধরে রংপুর নাট্যকেন্দ্র সেই আন্দোলনে দেশ ও বিদেশে তাদের নাটকের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চল তথা বাংলাদেশের সুনাম ধরে রেখেছে।
রংপুর নাট্যকেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক মুরাদ বলেন, নাটক অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেতুবন্ধন। আমরা সেই সেতুবন্ধনে এবার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ২ থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত আট দিনব্যাপী নাট্যোৎসব করছি। এ উৎসবে ভারতের একটি নাট্য দলসহ ৯টি দল অংশ নিচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাটক মঞ্চায়ন হবে। এছাড়াও উৎসব উপলক্ষে প্রতিদিন ৬টা থেকে উন্মুক্ত মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।
উৎসবের উদ্বোধনী দিনে আয়োজক দল রংপুর নাট্যকেন্দ্র পরিবেশন করে অমল রায়ের রচনা ও সুমিত মোহন্তের নির্দেশনায় নাটক ‘জাতিস্বর’। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় একই মঞ্চে ‘একজন দলিল উদ্দিন’ নাটকটি মঞ্চায়ন করে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাট্যদল। এ নাটকটির রচয়িতা ডা. আশুতোষ দত্ত, নির্দেশক রাজ্জাক মুরাদ।
শনিবার দুটি নাটক মঞ্চায়ন করবে রংপুর শিশু নাট্যকেন্দ্র ও রংপুর নাট্যকেন্দ্র। এর পরদিন ৫ নভেম্বর রোববার বিকন নাট্যকেন্দ্রের নাট্যিশিল্পীরা বৃন্দাবন দাসের রচনা ও আবু আজাদ রহমান নির্দেশিত নাটক ‘কাঁদতে মানা’ মঞ্চায়ন করবে।
সোমবার রংপুর নাট্যকেন্দ্রের ‘নীল ললিতার গীত’, মঙ্গলবার দিনাজপুর নাট্য সমিতির পরিবেশনায় ‘ক্যাপ্টেন হুররা’, বুধবার রংপুর নাট্যকেন্দ্রের ‘শিখ-ী কথা’ এবং সমাপনী দিন বৃহস্পতিবার ৯ নভেম্বর ভারতের অরণী নাট্য সংস্থার ‘সাকিন’ নাটকটি মঞ্চায়ন করবে।