বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চলছে নিয়মে। বর্জ্যর সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে, যত দিন যাচ্ছে ততো বেশি সমস্যা জটিল হচ্ছে। এই শহরে এখনো পচাগলা আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট প্রকাশ্যে খোলা ট্রাকে বহন করা হয়। ব্যস্ত রাস্তায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দিনের বেলায় নিষ্কাশন করা হয়। সিটি করপোরেশনে মেয়র ও কাউন্সিলরদের মর্যাদা, প্রভাব সুযোগ-সুবিধা আপগ্রেড হয়েছে। তাদের হম্বিতম্বিও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু একটা টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে পারেননি তারা। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পার হলেও স্বাস্থ্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব দুঃখজনক। বর্তমান সরকারের আমলে সিটি করপোরেশন বাজেট বহু গুণে বেড়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও কয়েক বছরে হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু মানসম্পন্ন নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়নি। দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকার অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক। এমনকি বিশে^র বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। এর পেছনে বর্জ্য অব্যবস্থাপনা অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে- ‘প্রতিদিন রাজধানীতে প্রায় ৭ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়।’ যথাস্থানে এগুলো ফেলার জন্য কার্যকরী কোনো অবকাঠমো না থাকার দরুন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নাগরিকদের। যদিও প্রায় ৮০ ভাগ বর্জ্য সংগ্রহের কথা বলা হলেও কার্যত বিপরীত চিত্র প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। একসময় ঢাকা শহরে প্রায় ৭ হাজার ওয়েস্ট বিন স্থাপন করা হয়েছিল। অদৃশ্য কারণে প্রায় সবই উধাও হয়ে গেছে। এমনকি অভিজাত এলাকায় সড়কের পাশে সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে সহাবস্থানেই থাকে বিভিন্নরকম প্রাণনাশী মেডিকেল বর্জ্য। এই বর্জ্যরে শতকরা প্রায় ২০ ভাগই সংক্রামক রোগ জীবাণুতে পরিপূর্ণ।’ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রয়োজন। তবে আমাদের দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট খোলা স্থানে বর্জ্যগুলো স্তুপ করা (ময়লার ভাগাড়) বুঝে থাকি; কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এটি কোনো সমাধান নয়। এভাবে বর্জ্য খোলা স্থানে ফেললে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, বিভিন্ন প্রকারের রোগবাহী জীবাণু ও কীটপতঙ্গের উৎপত্তি ঘটে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ল্যান্ডফিল বা ময়লার ভাগাড়ে বর্জ্যরে পরিমাণ কমাতে এগুলো সরাসরি পোড়ানো হয়। এতে প্রচুর গ্রিন হাউজ গ্যাস (কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি) নিঃসরিত হয়। এ ছাড়াও ল্যান্ডফিলে বর্জ্য পচে গিয়ে যে তরল নির্গত হয় তা ভূ-গর্ভের পানির সাথে মিশে পানি দূষিত করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে এমনিতেই বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা না গেলে দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর আরো বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই এ ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্যে আরো কঠোর আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতেই হবে। দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রচলিত আইনগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তবেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চিত্র পাল্টাতে শুরু করবে। যতটুকু বিশৃঙ্খলা আছে, তা সম্পূর্ণরূপে শৃঙ্খলায় চলে আসবে।"