সেবা নিশ্চিত করাই হলো কোনো অবকাঠামো নির্মাণের উদ্দেশ্য। কিন্তু সেই সেবা যদি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে ওই অবকাঠোমোর ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ থাকে না। বিশেষজ্ঞরা সব সময বলে থাকেন, আধুনিক অবকাঠামোয় সেবাটা যদি মানসম্মত করা না যায় তাহলে মানুষের আগ্রহে ভাঁটা পড়বে। যেকোনো প্রকল্পের সামগ্রিক উপযোগিতা তৈরি করতে হলে সেবার মান ধরে রাখার পাশাপাশি সেবাও নিশ্চিত করতে হবে। যেকোনো ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই অবকাঠামো যেন এলাকার মানুষের উপকারে আসে, কাজে লাগে। কিন্তু বাস্তবে কী দেখা যায়? কোনো সেতু বা কালভার্ট তৈরি হয়তো হলো, কিন্তু সেই সেতুতে ওঠার রাস্তা তৈরি হয়নি। ফলে এ ধরনের অবকাঠামো সাধারণ জনসাধারণের কোনো কাজে আসে না। আবার এমনও দেখা যায়, অনেক কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। নির্মাণকাজের এই দীর্ঘসূত্রতা সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়। উদাহরণস্বরূপ, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া খালের সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর। প্রায় তিন বছর হতে চলল, এখনো সেতুটির ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়নি। পাঁচ মাস ধরে কাজ বন্ধ। কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত ৯ বার চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় এলাকার ৯টি গ্রামের মানুষকে প্রায় তিন বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নির্মীয়মাণ সেতুর বেইস গার্ডারের রডগুলোতে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষের যাতায়াতের জন্য পাশে ছোট্ট একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। মানুষজন হেঁটে চলাচল করে। ব্যাটারিচালিত অটোবাইক, ভ্যানগাড়ি যাত্রীদের নির্মীয়মাণ সেতুর পশ্চিম পাশে নামিয়ে দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সাঁকো পার হয় না যাত্রীবাহী ছোট যানবাহনগুলো। স্থানীয় জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রাঙ্গামাটিয়া খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণ করা হোক। সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় আনন্দিত হয়েছিল কয়েকটি গ্রামের মানুষ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় তাদের ভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রকাশিত খবর থেকে এটা অন্তত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণেই সেতুর নির্মাণকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এলজিইডি এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েও কাজ শুরু করাতে পারেনি। তাদের হাতে কি কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই? স্থানীয় জনসাধারণের কথা ভেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।