'মানুষ চেনা বড় দায়'-মানুষ কি আসলে চেনা যায়? কোনটা আসল মানুষ-বাহিরেরটা নাকি ভেতরেরটা? একসাথে চলে, কথা বলে কিংবা কাজ করে ভেতরের মানুষটাকে চেনা সম্ভব? বাহ্যিক যা কিছু, সম্পর্কের পূর্বাপর, স্বার্থের আগে-পরে মানুষ একরকম আচরণ করে? কেউ একটুকু ভালোবাসে আর বাকিটুকু ভুলে পড়ে আবার কেউ একটুখানি ভুল করে অনেকখানি ভালোবাসে! কেউ একই পথে হাসতে পারে, কারো চোখের জলে নদী ভাসে!
কেউ যদি তাকে নিজ থেকে ধরা না দেয় তাকে চেনা অসম্ভব। মানুষ বহুরূপী। যে কোন পরিবেশে, যে কোন অবস্থানে যে কোন মুহূর্তে খাপ খাওয়াতে পারে! প্রত্যেকের অভিনয়ের আলাদা আলাদা মঞ্চ আছে! স্ক্রিপ্ট যত দুর্বল হোক অভিনয়ে সে পরাঙ্গম। সে মানুষের মন জয় করে পারে আবার টুপ করে ভেঙে ফেলতে পারে! মানুষ মানুষকে কাছে টানতে পারে আবার দূরে-বহুদূরে নিক্ষেপ করতে পারে! মানুষ সব পারে!
মানুষ মানুষকে সম্পূর্ণভাবে জানার জন্য একজীবন যথেষ্ট না! মানুষ কথা-কাজে ভিন্ন! বিশ্বাসে অন্যরকম! যে স্বার্থ বোঝে, যে স্বার্থ খোঁজে তার আচরণ দিয়ে তাকে কিছুটা আন্দাজ করা যায় হয়তো কিন্তু গোটা মানুষকে চেনা সম্ভব নয়! তাকে সন্তুষ্ট করা অসম্ভব। এক বালিশে মাথা রেখে কত কতো নালিশ জমে! নিজের সালিশেই নিজে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে! দূর তো আরও বহুদূরের ছায়া!
এই, আমিই কি আমাকে চিনি? মুহুর্তে আমার চাওয়া বদলে যায়, বিশ্বাস ভেঙে যায়। আমি চাই পরমাত্মীয় কিন্তু নত হই অনাত্মীয়ের কাছে! বিনীত হই ক্ষমতার কাছে! স্বার্থ হারাই শক্তির পাছে! রত্ন ভাবি শত্রুকে আর অবহেলা করি আমাকেই। স্বার্থনিজের মনের মধ্যো পরার্থতার আবেদন ঠুনকো! অথচ কথায়-অভিনয়ে নিজেকে হরহামেশাই মানুষ প্রমাণ করতে চাই! মানবিক মানুষ! যুদ্ধবিরোধী মানুষ! দুর্নীতিহীন মানুষ! অথচ সবকিছুে মূলসহ ডালাপালা নিয়ে ঘুরি! নীতিহীনতায় আশাপাশ ঘিরে রাখি।
ভেতর-বাহিরের আমির সাথে আমিত্বের দ্বন্দ্ব হয়। জীবনে ছন্দ আসে খুব কম। নিজেকে বড় ভেবে নত হতে কার্পন্য করি। আমি ঠিক-এমন বিশ্বাসে বাহিরের সব সঠিককে ভুলে ভরিয়ে দেই। আমার ভুলকে সঠিক প্রমাণ করতে খোঁড়া যুক্তি দ্ঁড় করাই। মাঝে মাঝে পাশবিকতা জেগে ওঠে, নৃশংসার পক্ষে চলি-তখন আমাকেই আমার চিনতে ভয় হয়! পরকে চেনার কথা কেমনে বলি! সহজপথ রেখে বাঁকা পথে চলি! পথের দোষ? মনের ঘুরপাক ঘুরপথে সত্যকে মিথ্যা বলি! (রাজু আহমেদ, কলামিস্ট)