বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় মিধিলা’র কারণে পূর্বসুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলে পল্লীতে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে দুই শতাধিক শুঁটকি সংরক্ষণের ঘর ও আলোরকোলের শতাধিক দোকানির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মালামাল সহ ৩৫ থেকে ৪০ কুইন্টাল মাছ পঁচে নষ্ট হয়েছে। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার। মৌসুমের শুরুতেই ক্ষয় ক্ষতির কারণে জেলে ও বহদ্দররা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের মোজাফ্ফর বহদ্দারের ২টি ট্রলার সহ ৯ টি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। সুকুমার বহদ্দরের নিখোঁজ একটি ট্রলার ভারতীয় সিমানা থেকে ফিরে আসার সময় গভীর সাগর থেকে ১৪ জন জেলেকে ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করে মাঝের কেল্লায় নিয়ে এসেছে।
শরণখোলা রেঞ্জ অফিস সুত্রে জানা যায়, এ বছর ধুবলা জেলে পল্লীতে ১৬ জন বহদ্দার, ৬৪ টি ডিপো, ৯৬ টি দোকান, ১ হাজার ৩৫টি জেলেদের থাকার ঘর সহ ১০ থেকে ১১ হাজার জেলে শুটকী মৌসুমে দুবলা সহ বিভিন্ন চরে অবস্থান করে। ঘূর্ণিঝড় মিধিলা’র কারণে পূর্বসুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলে পল্লী সহ সাগরে মাছ আহরণ করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। দুবলা জেলে পল্লীর সুকুমার বহদ্দরের নিখোঁজ একটি ট্রলার ভারতীয় সিমানা থেকে ফিরে আসার সময় গভীর সাগর থেকে ১৪ জন জেলেকে ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করে শনিবার সকালে মাঝের কেল্লায় নিয়ে আসে। উদ্ধারকৃত জেলেরা হচ্ছে মোস্তফা মুন্সীর ছেলে মোঃ হাবিব ও রাজু, কামরুল ইসলামের পুত্র রাহাত, নুরুল ইসলামের ছেলে মিজানুর, আঃ বারেকরে ছেলে ইউসুফ, সোনা মোল্লার ছেলে জয়নাল, আঃ রশিদের ছেলে জাফর, আঃ ছালামের ছেলে নাছির ও সোহাগ, জয়নাল আবেদীনের ছেলে হাসীব, আঃ রহমানের ছেলে রহিম, আদম আলীর ছেলে মোশারেফ, খলিলুর রহমানের ছেলে জামাল, হাসান মুন্সীর ছেলে রাজু এদের বাড়ী পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দীন আহম্মেদ শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলার প্রভাবে ৪দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। যারা গভীর সাগরে ছিল তাদের মধ্যে ৯টি ট্রলার এখনও জেলে পল্লীতে এসে পৌছায়নি বা কোথাও নিরাপদে আছে কিনা তা জানা যায়নি। বিকাল নাগাত সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। আলোর কোলে একটি ট্রলার মিচিং রয়েছে। সুকুমার বহদ্দরের একটি বোট পথভুলে ভারতের সীমানায় চলে যায়। আজ ভোরে ফিরে আসার সময় ১৪ জেলেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে। উদ্ধারকৃত জেলেদের আজ বিকেলে পাথরঘাটায় নিজ বাড়িতে পাঠানো হবে। চট্টগ্রামের মোজাফ্ফর বহদ্দরের দুটি ট্রলার নিখোজ রয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর তথ্য মতে তিনি আরও জানান, দুবলাসহ চারটি চরে আহরণকৃত প্রায় দুই কোটি টাকার শুটকি মাছ শুকাতে না পারায় নষ্ট হয়েছে। যা সাগরে ফেলে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আবহাওয়া কিছুটা ভালো হওয়ায় আজ থেকে আবার মাছ ধরা শুরু হতে পারে। তবে শুরতেই বড় ধরনের এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়বে।
দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, শনিবার সকালে শুঁটকি উৎপাদনকারী মাঝের কিল্লা, আলোরকোল, নারকেলবাড়িয়া, শ্যালার চরসহ চারটি চর পরিদর্শন করেছি। সব চরেই ঝড়ের ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি মাচা, চাতাল ও আড়ায় থাকা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কুইন্টাল মাছ পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। ঢেকে রাখা আংশিক শুঁকনা মাছে পানি লেগে পোকায় ধরেছে। এদিয়ে আর শুঁটকি হবে না। এ ব্যাপারে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখ মোঃ মাহবুব হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলার প্রভাবে দুবলা জেলে পল্লীতে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমান এখনও জানা যায়নি।