আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা মহাব্যস্ত সময় পাড় করার মধ্যেই নগরী সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীর দখলের উৎসব চলছে। গত কয়েকদিন ধরে শহর লাগোয়া শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতুর নিচে নদীতীর দখল করে হিরন মাহামুদ নামের জনৈক এক ব্যক্তি ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেছেন।
এছাড়াও আশপাশ এলাকাসমূহে কীর্তনখোলা নদীতীর দখল করে একাধিক স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত কয়েক বছর যাবৎ দখলকারীদের তালিকা প্রনয়ণসহ ব্যবস্থাগ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে আসলেও অধ্যবধি দখলকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিন দিন কীর্তনখোলার তীর দখল হয়ে অসংখ্য স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, নগরীর আমানতগঞ্জ খাল থেকে রূপাতলী দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭০ কিলোমিটার কীর্তনখোলার তীর তাদের আওতাধীন। যার অর্ধেকই দিনে দিনে বেদখল হয়ে গেছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, বিগত দুইবছর আগে বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের তদন্ত তালিকায় প্রায় চার হাজার দখলকারীর নাম উঠে এসেছে। তবে এখন ওই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপরীতে শান্ত-স্নিগ্ধ-স্রােতস্বীনি কীর্তনখোলা সংকুচিত হয়ে আসছে।
সচেতন বরিশালবাসীর মতে, বিআইডব্লিউটিএ এবং বরিশাল জেলা প্রশাসন কীর্তনখোলা নদী রক্ষায় কয়েক বার উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানালেও পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে তা থমকে রয়েছে। ফলশ্রুতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরবতার কারণে নদীতীর দখলের উৎসব চলছে।
শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর নিচে সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর অন্তত ১০/১৫ ফুট দখল করে একটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বসানো ব্লক তুলে তা দিয়ে নদীর বড় একটি অংশজুড়ে দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। সোমবার সকালে নির্মান শ্রমিকরা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠান মালিক হিরন তাদেরকে নদীতীরে ভবন তৈরি করার কাজ দিয়েছেন এবং তিনিই বলেছেন, সরকারি ব্লক তুলে তা দিয়ে ভবনের নিচের পাইল করতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালিজিরা থেকে বেলতলা পর্যন্ত কীর্তনখোলার তীর দখলে বর্তমানে একধরনের মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে এই দখল প্রক্রিয়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সচেতন নগরবাসী মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা ব্যস্ত থাকার সুযোগটি নিতে চাইছে ভূমিদস্যুরা। তারা সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে একের পর এক নদীতীর দখল করে ভবন নির্মান কাজ অব্যাহত রেখেছে।
নদীতীরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কীর্তনখোলা যারা ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে তাদের অধিকাংশই প্রথমে ইট-পাথর ও বালুর ব্যবসা করতে গিয়ে যে যার সুবিধামতো করে নদীতীর দখল করেছেন। কেউ নির্মাণ করেছে ভবন, আবার কেউ চারিদিকে বাউন্ডারিতে আবদ্ধ রেখে ভেতরে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। দখলকারীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কিছু বলা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা।
সর্বশেষ শহীদ আবদুর বর সেরনিয়াবাত সেতুর ঢালে হিরন মাহামুদ নামের এক ব্যক্তির দখল প্রক্রিয়া বন্ধে কোনো প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করেননি জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। অভিযুক্ত হিরন মাহামুদ নদীতীর দখলের কথা স্বীকার করে বলেন, অনেকের চেয়ে কম নিজের দখলে আছে। বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যাওয়ার আর্জি রাখেন, দিয়েছেন আর্থিক সুবিধার প্রস্তাব। এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খালিদ বলেন, আমি বরিশালে সবেমাত্র কয়েকদিন হলো যোগদান করেছি। তারপরেও চলমান নদী দখল প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুত সকল দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।