ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রভাবশালী ও অবৈধ দখলকারদের দখল উৎসব আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অবহেলার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে শহরের আড়পাড়ার অফদা খালটি। একসময় এই খাল দিয়েই চিত্রা নদীতে পড়তো মোবারকগঞ্জ চিনিকলের বর্জ্যরে পানি। খালটি চিত্রা নদীর সাথে সংযোগ থাকার কারণে আড়পাড়ার মাঠ ও বিলের পানি এই খাল দিয়ে চিত্রা নদীতে পড়তো। আড়পাড়া গ্রামের সকল পানি এ খাল দিয়ে প্রবাহিত হত। খালটি দখল করে হরহামেশাই দখলকারিরা তৈরি করছে বড় বড় মার্কেট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দেশ স্বাধীনের পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে অবৈধভাবে দখলের কারণে খাল এখন দেখে চেনার উপায় নেই। এসব ভূমিদস্যুর হাত থেকে এই পুরাতন খালটি দখলমুক্ত করার দাবি এলাকাবাসীর। খালের নব্যতা হারিয়ে গেছে, ফলে দেখে মনে হবে এটা একটি পানির ড্রেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের প্রান কেন্দ্রে দিয়ে বয়ে যাওয়া ২ কিঃ মিঃ ওয়াপদা খালটির উৎপত্তি স্থল শহরের আড়পাড়ার গ্রামের মাঠ। এই মাঠ থেকে মহিলা কলেজের উত্তরপাশ দিয়ে বয়ে গিয়ে হাসপাতালের নিকটবর্তী চিত্রা নদীতে মিশেছে। অফদা খালটি এখন মৃত প্রায়। অবৈধভাবে দখল করে খালের দু’পাশে বাড়ি এবং অবশিষ্ট অংশ ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে। বর্জ্য ফেলায় দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে ফলে দু’পাড়ের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর। বর্তমানে এলাকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকাল এলেই পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে শহরের একাংশ।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় আগাছা ও ঘন বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। বোঝার উপায় নেই যে এটা একটা খালি। দু’পাড় দখল করে বড় বড় ইমারত আর দোকান বসিয়েছে অবৈধ দখলকাররা। অন্যদিকে ময়লা-আবর্জনা আর বর্জ্য ফেলে পরিবেশন দূষণ হচ্ছে। মশা-মাছির উপদ্রবসহ নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার বাসিন্দারা। বর্ষাকাল এলেই চিত্র পাল্টে যায়। খাল দিয়ে পানি নদীতে প্রবাহের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত ছাপিয়ে বসত বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে, তলিয়ে যায় শহরের নিম্ন অঞ্চল। এলাকাবাসীর অভিযোগ এইসব জলাশয় গুলো তদারকি করার কেউ না থাকায় যার যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে।
খালটি অবৈধ দখলকারদের হাত থেকে মুক্ত করার বিষয়ে কথা বললে পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে ব্যস্ত এবং বাণিজ্যিক উপজেলা। এই উপজেলার প্রানকেন্দ্র দিয়ে এই খালটি প্রবাহিত হয়েছে। খালটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি অচিরেই প্রশাসনের সহয়তায় দখলমুক্ত করে পুরাতন যে রূপ ছিল সেই রূপ ফিরিয়ে আনবো।
এলাকাবাসীর দাবি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী অচিরেই সকল জলাশয় মুক্ত করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। এই নীতি অনুসারে খালটির অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে পুনরায় খনন করে পানি প্রবাহ ও পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা নিবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা করেন এলাকাবাসী।