বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের সময় ‘অগ্নিসন্ত্রাসে’ ক্ষতিগ্রস্ত বাসমালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সরকারি এ ঘোষণার পরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কাছে শতাধিক বাস মালিক আবেদন করেছেন। আজ বুধবার সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সরকার অগ্নিসন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেওয়ার পরে এখন পর্যন্ত শতাধিক বাস মালিক আবেদন করেছেন। এখনও আবেদন জমা পড়ছে। এরপরে যাচাই-বাছাই করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হবে। তবে আবেদন প্রক্রিয়া ধীরগতির হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন মালিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। মালিক সমিতির বিরুদ্ধে বললে ক্ষতিপূরণ পাবেন না এমন ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন মালিক বলেন, হরতালে ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই গাড়ি চালান না। তারপরও যারা চালান ক্ষতির শিকার হলে মালিক সমিতি পাশে দাঁড়ায় না। ২০১৪-১৫ সালের অগ্নিসন্ত্রাসের সময় অনেক পরিবহন মালিক ক্ষতিপূরণ পাননি। তবে মালিক সমিতির অনেক নেতা ভুয়া কাগজ তৈরি করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। অনেক সাধারণ পরিবহন মালিকরা গাড়ির ক্ষতিপূরণ পাবেন কিনা এটা ভেবে আতঙ্কে রয়েছেন বলেও জানান তিনি। রাইদা পরিবহনের মালিক রতন খানের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩৭১০) গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়। এরপর থানায় জিডি করেন ও মালিক সমিতিতে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেন। তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণের আবেদন করার পরে আমাকে বলা হয়, কয়েক দিনের ভেতরেই ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু গত ১৫-২০ দিন ধরে কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। বাস পড়ে আছে, টাকার অভাবে কাজ করাতে পারছি না। কেমন খরচ হবে গাড়ি মেরামত করতে এমন প্রশ্নের জবাবে এ পরিবহন মালিক বলেন, আনুমানিক ১০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। গতবার ক্ষতিগ্রস্ত এক মালিক মাত্র এক লাখ টাকা পেয়েছেন। নেতাদের হাতে কত টাকা আসে আর আমরা কত পাবো তার কিছুই জানি না। তবে বিকল্প পরিবহনের মালিক ও বাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলছেন ভিন্ন কথা। কয়েকদিন আগে রাজধানীতে বিকল্প পরিবহনে তার একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই পরিবহন মালিক নেতা বলেন, ২০১৩-১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসে ৯২ জন পরিবহন শ্রমিক নিহত ও তিন শতাধিক আহত হয়েছিলেন। আহত-নিহত শ্রমিকসহ ক্ষতিগ্রস্ত সব বাস মালিকেরা সরকারের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমার সে সময় একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তার বিনিময়ে আড়াই লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের চেক পেয়েছিলাম। এবার তার রেজিস্ট্রেশনভুক্ত বিকল্প পরিবহনের তিনটি গাড়ি ‘অগ্নিসংযোগের শিকার’ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি থানায় জিডি করে ক্ষতিপূরণের জন্যে আবেদন করেছি। অন্যদিকে বাস মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার জানিয়েছেন, এর আগে ২০১৩-১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত মালিক-শ্রমিকদের ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল সরকার। এবারও ক্ষতিপূরণ যথাযথভাবে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সরকার জানিয়েছে। এর আগে ৩ নভেম্বর গাবতলী বাস টার্মিনালে আয়োজিত এক মালিক-শ্রমিক সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের র্যাব, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ; সবাই সজাগ থাকবে, যাতে করে পরিবহন জগতে আপনারা কোনো অসুবিধা ফেস না করেন। আমরা সেই ব্যবস্থা করছি। নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আপনাদের পাশে রয়েছে। ওই সমাবেশে বাস-ট্রাক মালিক সমিতির নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, অবরোধে নিয়মিত বাস থেকে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলাচল করবে। কোনো যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমিতির মাধ্যমে সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে। এ ছাড়া বিএনপির ডাকা অবরোধে মোটরশ্রমিক হতাহত হলেও সেই দায়িত্ব সরকার নেবে। ৩১ অক্টোবর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেসব গাড়ি পুড়িয়েছে, ২০১৩, ২০১৪ ও ১৫ সালে একই রকম অবস্থা। তিনটি বছর ধরে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস আর আক্রমণ। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। যাতে তারা ব্যবসাটা চালাতে পারেন। আহত নিহতদের আমরা সহায়তা দিয়েছি। এবারও যাদের বাস পুড়েছে তাদেরটা সরকার দেখবে।