ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বারোবাজারে ট্রেন লাইনের উপরেই ঝুকি নিয়ে বসে মাছের বড় বাজার। এখান থেকে প্রতিদিন গাড়ি ভরে মাছ চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। মাছ ব্যবসায়িরা প্রতিনিয়িত চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে বেচাকেনা। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় মাছ বিক্রি। বেলা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ট্রেন লাইনের উপরেই বসে যায় বাজার। ট্রেন লাইনের দু’ধার দিয়ে অল্প কিছু জমিতে গড়ে উঠা মাছ বাজারটি ক্রমেই বড় মোকামে পরিণত হওয়ায় ট্রেন লাইনের উপরেই বসে মাছ বাজারটি। দীর্ঘ ৮৭ বছর রেললাইনে বসছে দক্ষিণাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বারোবাজার মাছ বাজারটি। মাছ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, নিরাপদ স্থানে বাজারটি স্থানান্তরের জন্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি মহলে ধর্ণা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। গত ৫ জুলাই বারোবাজার মাছ বাজারে ট্রেনে কাটা পড়ে আবদুল খালেক নামে এক ব্যাক্তি নিহত হয়েছে। এমন ঘটনা প্রতি বছর ঘটেই থাকে।নিহত খালেক উপজেলার বাদেডিহি এলাকার বাসিন্দা।
বারবাজারের একাধিক মাছ ব্যবসায়ী জানান, ১৯৩৬ সালে তাদের এলাকার হাজের আলী বিশ্বাসসহ ৫/৬ জন ব্যবসায়ী বারোবাজারের রেল স্টেশনের পাশেই লাইনের দু’ধার দিয়ে ছোট ছোট ঘর করে মাছ বেচাকেনা শুরু করেন। সে সময় মালামাল পরিবহনের সুবিধার জন্য রেলওয়ের জায়গায় মাছ বাজার বসানো হলেও পরবর্তীতে রেলওয়ের কাছ থেকে তারা জায়গা বন্দোবস্ত নেন। সে সময় থেকেই এ স্থানে বাজারটি চলে আসছে। আগের দিনে আড়তের সংখ্যা কম থাকায় রেল লাইনের পাশে হলেও ব্যবসা চালিয়ে যেতে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আড়ত ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল-বিকালে ক্রেতা বিক্রেতাদের থাকে চরম ভীড়। রেল লাইনের উপর দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়ে। ক্রেতা বিক্রেতারা লাইনের উপর দিয়ে এপাশ ওপাশ চলাফেরা করেন। হঠাৎ ট্রেন এসে গেলে বিপদের শেষ থাকে না।ব্যবসায়ীরা জানালেন, আড়ত মালিকদের রেলওয়ের নিকট থেকে লাইনের দুই ধারের ৪৯ শতক জমি বন্দোবস্ত নেয়া আছে। কিন্তু বাজারের কেনাবেচা ও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ায় বেশি জমির দরকার। প্রয়োজন মতো জায়গা না পাওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে বাজারে মাছ বিক্রি করতে এসে রেল লাইনের উপর বসতে বাধ্য হচ্ছেন। তাছাড়া লাইনের দুইপাশের আড়ত গুলোর পিছনে রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। ফলে আড়ত গুলো পিছিয়ে নেবারও সুযোগ নেই।
যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে স্থানটি। কিন্তু অবৈধ এ মাছের বাজার উচ্ছেদে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।প্রথমে হাতে গোনা কয়েকটি মাছের আড়ত থাকলেও পরবর্তীতে রেললাইনের পাশ ঘেঁষে আড়ত ও মাছের বাজার গড়ে উঠে। বর্তমানে রেললাইনের দু পাশেই মাছের জমজমাট বাজার। মাঝখান দিয়ে শুধু লাইন চলে গেছে। আর ট্রেন চলাচলের জন্য লাইনটিও যেন ফাঁকা থাকছে না। এই রেল লাইনের উপরেই দেদারছে বসছে বাজার। ট্রেন আসলেই ছোটাছুটি করে লাইনের উপর থেকে সরে যাচ্ছে মাছ বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষ। ফলে ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। তবুও এই অবৈধ মাছের বাজার উচ্ছেদে নেই রেল কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ।
২০০৭ সালে ১/১১ এরপর অবৈধ মাছ বাজার ভেঙে দেয়া হয়। তারপর ২০০৯ সালে আবার মাছের আড়ত ও মাছ বাজার গড়ে উঠেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আইন কানুনের কোনো তোয়াক্কা করছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলেন, এখানে বাজার অবৈধ হলেও আমরা ব্যবসা করছি। মূলত বাজারের কারণে কোনো সমস্যা হয় না। ট্রেন আসলে আমরা দৌঁড় দেই।
পাশের মোবারকগঞ্জ রেল ষ্টেশনের মাষ্টার জানান, খুলনা থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ২’শ ৪৭ কিলোমিটার ট্রেন লাইন রয়েছে। এ লাইন দিয়ে প্রতিদিন আন্তনগর আর মেইল এবং ডাউনে ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও রয়েছে মালবাহী ট্রেনের আসা-যাওয়া। ফলে লাইনটি সব সময় থাকে ব্যস্ত।