দেশে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ভোজ্য তেলের চাহিদা। এ ভোজ্য তেলের চাহিদা পুরণে ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে উচ্চ গুণাগুণে সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল জাতীয় ফসল সাউ পেরিলা। ফলনও প্রায় দেশিয় সরিষার মতোই। অল্প সময়ের ফসল সাউ পেরিলা। সাউ পেরিলা চাষে অধিক লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। এ পেরিলা চাষের মাধ্যমে ভোজ্য তেলের চাহিদা পুরণের পর বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় প্রথম সাউ পেরিলা চাষ শুরু করেন আলহাজ¦ মজিবর রহমান (৭০)। তিনি গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ১০ শতক জমিতে সাউ পেরিলা চাষ ও তেল উৎপাদন করে সাফল্য পান। এবার তিনি ৫০ শতক পরিত্যক্ত জমিতে চাষ করেছেন। আলহাজ¦ মজিবর রহমান উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের টগরপাড়ার মৃত টগরউদ্দিনের ছেলে। তিনি চলতি বছর ভুল্লারডাঙ্গা-কাচিনীয়াহাট আঞ্চলিক সড়কের দুইপাশে এবং বেলান নদীর ধারে পতিত ৫০ শতক জমিতে সাউ পেরিলা চাষ করেছেন। তিনি জানান, বীজ রোপন থেকে ফসল সংগ্রহ করা পর্যন্ত মাত্র দুই হাজার টাকা খরচ হবে। ফসল থেকে প্রাপ্ত পেরিলার তেল অন্তত ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই ফসল সংগ্রহ করা যায়। তিনি আরো জানান, আমি পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত সংবাদ দেখে পেরিলা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। রংপুরের কিশোরগঞ্জ এলাকার শাহজাহান আলীর নিকট গত ২০২২ সালে পেরিলার বীজ সংগ্রহ করি এবং তার পরামর্শে তেল সমৃদ্ধ ফসল পেরিলা চাষ শুরু করি। ছায়াযুক্ত স্থানে পেরিলা চাষ করা যায়। এর গাছ গরু-ছাগলও খায় না। এ গাছের কচিপাতা শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। এর পরিচর্যায় তেমন কোন খরচ নেই। খুব সহজেই উৎপন্ন ও সংগ্রহ করা যায়। আমার লক্ষ্য হচ্ছে পতিত জমির সঠিক ব্যবহার করা। জানা গেছে, বাড়তি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ভোজ্য তেল উৎপাদনে কয়েকটি দেশে সাউ পেরিলা জনপ্রিয়। ভোজ্য তেলের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এ ফসল চাষে আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় নতুন এ তেল ফসলটি নিবন্ধন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। পেরিলা লেমিয়াসি (মিন্ট ক্রপ) পরিবারের একটি ফসল। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এসিয়া তথা চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল, ভিয়েতনাম এবং ভারতের কিছু এলাকায় চাষ হয়। মূলত ২০২০ সালে দীর্ঘ সময় গবেষণার পর দেশের ১৪টি জেলায় সফলভাবে পেরিলার পরীক্ষামূলক চাষ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে দেশের ৫০টির বেশি জেলায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় সাউ পেরিলা। চলতি বছরও দেশের বিভিন্ন স্থানে পেরিলা চাষ হচ্ছে। উচ্চ গুণসম্পন্ন এ তেল আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য প্রতি লিটার দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তেল ভাঙ্গার সরিষার মেশিনগুলো থেকেও পেরিলার তেল বের করা যায়। পেরিলা তেলের শতকরা ৬৫ ভাগই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা হার্টের রোগের জন্য খুবই উপকারী। মোট ফ্যাটের শতকরা ৯১ ভাগ অসম্পৃক্ত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। চোখের জন্যও বেশ উপকারী। বিশেষত হৃদযন্ত্র, মতিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। কৃষি উদ্যোক্তা আলহাজ¦ মজিবর রহমান বলেন, পেরিলা বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরেই চাষ হচ্ছে। পানি জমে না এমন উঁচু জমিতে এর ফলন ভালো হয়। বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি পেরিলা চাষে বেশ উপযোগী। খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, দেশে পেরিলার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ভোজ্য তেল হিসেবে এর গুণাগুণ অত্যন্ত উচ্চ মানের। আন্তর্জাতিক বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পেরিলা চাষে যেন সবাই এগিয়ে আসে। আমরা চেষ্টা করছি অদূর ভবিষ্যতে এর চাষ সারাদেশে সম্প্রসারণ করা যায়।