রংপুরের পীরগঞ্জে বিএমডিএ মেগা প্রকল্পের অওতায় নদী খননের ফলে কৃষকের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। নিচু ও জলাশয় এলাকায় আমন মৌসুমে ব্যাপক হারে ধানের চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফসল এ বছরই প্রথম চাষিদের স্বপ্ন পুনন হতে চলেছে।
বিএমডিএ পীরগঞ্জ উপজেলা জোন কর্তৃপক্ষ জানায়, উপজেলার ৮ টি বিলে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাজারো কৃষকের চিন্ত দূর করে বিলের নিচু জমিগুতেও এ মওসুমে রোপা আমন ধানের চাষা করা হয়েছে। অনেকেরই আগাম জাতের পাকা ধান ঘরে উঠাতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে কথা হয় ধান চাষি মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর গ্রামের কৃষক ফজলু মিয়া ও আবুল হোসেনের সাথে। তারা বলেন-সানেরহাট এলাকার নলেয়া বিলে তাদের ১০ একর জমি রয়েছে। কয়েক যুগ ধরে এই এসব জমি থেকে দুই মুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারেননি। জমিগুলোতে আবাদ না পেয়ে দারিদ্রতা গ্রাস করেছিল। এভাবেই দিন কাটছিল। এমনকি প্রতিবছর ঋণের ঘানি টানতে টানতে মাথায় বোঝা হয়ে গিয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে তাদের জমিগুলো অনাবাদি পড়ে ছিল। গোটা বছরে মাত্র দুটি আবাদ, আর সেই আবাদ জলাবদ্ধতা চুরমার করে দিত। নলেয়া নদী খননের ফলে তাদের এলাকার শান,মরা শান,মোলামী, মুগদামী, শগ্নে,ফলেয়া,গুড়গুড়ি,মেষ্টা,শিমুলিয়াসহ কয়েকটি বিলের জলাবদ্ধতা সম্পুর্ন দূর হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার পানি এ বছর নলেয়া নদী গিলে ফেলেছে। যে কারণে তাদের নিচু জমিতে এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মেষ্টা গ্রামের সুমন ব্যাপারী ও রাজু মিয়া বলেন, মরা নলেয়া নদী কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের অভাব দূর করে দিয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে শান নদীর এলাকায় নিচু জমিতে কৃষি ফসল না পেয়ে অনেকেই ঢাকা মুখি হয়েছিল। এ বছর আমন মৌসুমের শেষ নাগাদ যে হারে পানির চাপ ছিল, নদীটি খনন করা না হলে এ বছরও তাদের ধান ঘরে উঠত না। নলেয়া নদী এবার উজানের পানি গিলে খেয়েছে, তাই তাদের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা মুখি কৃষক এখন গ্রামের এসে চাষাবাদে করবে। শানেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মেজবাহুর রহমান বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিএমডিএ) কৃষকের স্বপ্ন ফিরিয়ে দিয়েছে। এই নদী খননের ফলে জলাবদ্ধতা দূর করে হাজার হাজার কৃষকের অনাবাদি জমিতে এবার ধানে ধানে ভরে গেছে মাঠ। প্রতিটি জমিতেই আমন ধানের বাম্পার ফলনের আসা করা যাচ্ছে। চাষিরা আনন্দে অগ্রহায়ণ মাসেই নবান্ন উৎসবের মাধ্যমে ধান কাটা মারা শুরু করেছে।
বিএমডিএ এর রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান খান বলেন, নলেয়া নদী পুনঃ খননের ফলে পীরগঞ্জে ধানসহ সকল কৃষি ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। বিশেষ করে কিছু বিলে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষি ফসল পানির নিচে ডুবে থাকতো সেখান থেকে চাষিরা ফসল ঘরে উঠাতে পারতো না। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিএমডিএ) মরা নদী খননের ফলে কৃষক সোনার ফসল বুনে যাচ্ছে এবং অই অঞ্চলে ফসল উৎপাদন বেড়েছে।