মাত্র ৮,শ টাকার বেতনের কাজ করতে গিয়ে ১৩ বছর বয়সী ছোট ছেলে সজল দাস নিজ বাড়ির ছাপড়া ঘরের সামনে বাম হাতে ব্যান্ডেজরত অবস্থায় চেয়ারে বসে ফ্যালফেলে দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। হাতের যন্ত্রনায় কাদছে সজল দাস। গত ২৫ নভেম্বর কালীগঞ্জ শহরের মধুগঞ্জ বাজারের করিম কমপ্লেক্স মার্কেটে অবস্থিত পূজা জুয়েলার্সের কারখানায় কাজ করতে করতে গিয়ে তারপাতের ইলেকট্রিক মেশিনে সজল দাস এর বামহাতে তর্জনী আঙ্গুলটি কেটে পড়ে যায়। প্রতি সজল কে সপ্তাহে মাত্র ২ শত টাকা হারে অর্থাৎ মাসে মাত্র ৮ শত টাকা মজুরিতে পূজা জুয়েলার্সে এক বছর কাজ করত। সজল দাস উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের মদন দাস ও চম্পা দাস এর ছোট ছেলে। হকারি করে পাঁচজনের অভাব অনটনের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। একপ্রকার বাধ্য হয়ে বাবা মদন দাস তার ছেলে কে তৃতীয় শ্রেনিতে পড়া অবস্থায় স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে কাজে স্বর্ন দোকানে কাজ শেখাতে পাঠান। অভাবের সংসার ছেলে কে লেখাপড়া করাতে না পারার কারণে তাকে কাজে দেয় অভাব নিরাসনের জন্য। শিশু সন্তান সপ্তাহে ৬দিন সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সোনার দোকানের কারখানায় কাজ করে যে টাকা আয় হয় তা বাবার হাতে দিয়ে থাকে।সজল দাসের দূর্ঘটনায় অঙ্গহানি ঘটলেও পূজা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী বিজয় কুমার কোন খোঁজ- রাখেনি এ পর্যন্ত। কালীগঞ্জ শহরের জুয়েলার্স ব্যবসায়ি পূজা জুয়েলার্সের মালিক বিজয়কুমার দীর্ঘদিন ধরে তার সোনার অলংকার তৈরির কারখানায় শ্রমিক আইন অমান্য করে শিশু শ্রমিকদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করিয়ে থাকে। সজল দাস এর মা চম্পা দাস জানান, অভাবের কারণে ছেলেকে কাজে পাঠাইছিলাম। কাজ করতে গিয়ে আমার ছেলের এ দুর্ঘটনা ঘটলো। অথচ দোকান মালিক একবারও আমার ছেলের খোঁজ নিলো না। কালীগঞ্জ উপজেলা অলংকার প্রস্তুতকারী শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক সুশান্ত মালী এবং সদস্য সচিব ইকবল আলী বলেন, শিশু শ্রমের বিরোধিতা করে সজল দাসের অঙ্গহানির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। পূজা জুয়েলার্সের মালিক বিজয় কুমার বলেন, খোঁজখবর নিতে পারিনি। কাজ না জানলে কেউ কাউকে টাকা দেয়? শিশু শ্রমের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি তা কৌশলে এড়িয়ে যান। কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুল্লাহ হাবিব জানান, শিশু শ্রম আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যারা শিশুদের দিয়ে সামান্য পারি শ্রমিকের বিনিময়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করাচ্ছেন প্রথমে তাদেরকে চিহ্নিত করে সতর্ক করতে হবে এবং পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।