নিরাপদ সড়ক চাই দীর্ঘ ৩০ বছরের পথপরিক্রমায় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সড়ককে নিরাপদ করার লক্ষ্যে যে আন্দোলন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও নিসচা’র ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সারাদেশে সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। আজ ১ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) মোঃ আখতার হোসেন, খাদ্য সচিব মোঃ ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশ স্কাউটের কোষাধ্যক্ষ সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মোঃ শাহ কামাল, অফিসার্স ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপি ত সাবেক সিনিয়র সচিব কে এম মোজাম্মেল হক। সভাপতিত্ব করেন নিসচা’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। বক্তব্য রাখেন মহাসচিব লিটন এরশাদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহাসচিব লিটন এরশাদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মোঃ আব্দুল আলিম। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন যুগ্ম মহাসচিব গনি মিয়া বাবুল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহবায়ক কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মো: রোকনুজ্জামান রোকন। উপস্থিত ছিলেন নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা আইযুুবুর রহমান খান, এএইচ নোমান, ম. হামিদ, ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জুলী কাজী, বেলায়েত হোসেন খান নান্টু, যুগ্ম মহাসচিব গনি মিয়া বাবুল, অর্থ সম্পাদক আসাদুর রহমান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমানও এডভোকেট তৌফিক আহসান টিটু, দপ্তর সম্পাদক ফিরোজ আলম মিলন, প্রচার সম্পাদক একেএম ওবায়দুর রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহসিন খান, যুব বিষয়ক সম্পাদক এম নাহিদ মিয়া, নির্বাহী সদস্য নাসিম রুমি, এ কে আজাদ, এম কাইয়ুম খান, কামাল হোসেন খান, আবদুর রাজ্জাক, নুরুল হুদা, এডভোকেট দীপক কুমার সরকার প্রমুখ।
তিন দশকের পথচলায় এই সংগঠন সড়কের নিরাপত্তার কথা বলে আসলেও দেশের যে কোন দুর্যোগ এবং অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাাঁড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জনকল্যানমুখী কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে থাকে। এই কর্ম পরিকল্পনায় নগদ অর্থসহ আয়মূলক বিভিন্ন লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে মোমবাতি মেশিন প্রদান, হুইল চেয়ার, কৃত্রিম পা, ক্র্যাচ, ছোট দোকান তৈরি করে দেয়া (পুঁজিসহ), গরু-ছাগল প্রদান, সেলাই মেশিন বিতরণ, গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেয়া এবং শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। প্রতিবছরের ন্যায় এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সহায়তামূলক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এবারও শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ, সেলাই মেশিন বিতরণ ও সারাদেশে ৩০০ পরিবারের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হবে। আমরা মানবিক কাজে ইচ্ছেশক্তির পূর্ণ ব্যবহার করে থাকি। আমাদের সকল কাজে বিভিন্ন জনের সাড়াও থাকে। আমরা সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যেতে চাই। চাই সড়কসহ সকল ধরনের জনকল্যাণমুখী কাজের মধ্যদিয়ে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে।
প্রসঙ্গত আমাদের সাধ্যের মধ্যে পরিচালিত এই সহায়তামূলক কর্মকা- সীমিত আকারে হলেও চলমান এই প্রক্রিয়া প্রায় দুই দশকের। আমরা শুধু সহায়তা দিয়েই বসে থাকি না। চলে পরিচর্যাও। ফলে আমাদের এই কর্মকা- বছর শেষে ভালো একটা রেজাল্ট বয়ে আনে। সহায়তাপ্রাপ্তদের মুখে হাসি ফুটে উঠে। নিয়মিত পরিচর্যা ও পরামর্শে অনেকের জীবনে একটু একটু করে আলোও ফুটেছে। গতবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের এই চলমান প্রক্রিয়ায় সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে দুগ্ধজাত ছাগল (মাতৃ) বিতরণ করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটিসহ দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ১২০টি শাখার মাধ্যমে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহত অসহায় ৩২০টি পরিবারদের মধ্যে দুগ্ধজাত (মাতৃ) ছাগল বিতরণ করা হয়। এই সহায়তা কর্মসূচি ১ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে শুরু হয়ে চলে সারা বছরব্যাপি। বছর শেষে আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে পরিবারগুলো দুগ্ধজাত (মাতৃ) ছাগল পালন করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। সহায়তাপ্রাপ্ত এক একটি পরিবারের ঘরে এখন পাঁচ থেকে ছয়টি করে ছাগল রয়েছে। সারাদেশে সহায়তাপ্রাপ্ত ৩২০টি পরিবারের ঘরে ছাগলের সংখ্যা বাচ্চা মিলিয়ে প্রায় ১০৫০ এর উপরে। নিসচার শাখা সংগঠনগুলোর অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
উল্লেখ্য নিসচা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন গত বছরের এই রিপোর্টেও প্রেক্ষিতে এবারও মাতৃছাগল লালন-পালনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যাতে আর্থিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হতে পারে সেই লক্ষ্যে এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক এবারও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহত অসহায় পরিবারদের মধ্যে সারাদেশের প্রায় ৩০০ পরিবারের মাঝে বছরব্যাপী দুগ্ধজাত (মাতৃ) ছাগল বিতরণের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
এ কথা না উল্লেখ করলেই নয়, নিসচার এই সহায়তামূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় চেয়ারম্যানসহ কর্মীদের নিজস্ব অর্থায়নে। প্রতি বছর নিসচার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মাটির একটি ব্যাংক সংরক্ষণ করেন। ওই মাটির ব্যাংকে সারা বছর জমানো অর্থ এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রক্ষিত মাটির ব্যাংকের জমানো অর্থ, নিসচার শাখাসমূহের নিজস্ব তহবিল ও শুভাকাঙ্খীদের অনুদান এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার বিজ্ঞাপণ থেকে প্রাপ্ত অর্থের সব মিলিয়ে এই সহায়তা কর্মকান্ডের খরচ বহন করা হয়। কর্মসূচী সূচারুভাবে পরিচালনায় অর্থ ঘাটতি দেখা দিলে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অনুদান থেকে ঘাটতি পূরণ করা হয়। মোট কথা পথচলার এই ত্রিশ বছরে মূলত নিসচা’র যোদ্ধারাই নিজেদের পকেটের টাকা বেশিরভাগ খরচ করে বছরব্যাপী নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।
প্রসঙ্গত সাফল্য ও গৌরবের অধ্যায় রচনা করে সামাজিক আন্দোলন নিসচা তিনদশকের মাইলস্টোন অতিক্রম করেছে। এই সময়ে নিসচার দাবি ও সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের বিভিন্ন কাজে ভূমিকা রাখায় সাফল্যের পালকে যুক্ত হয়েছে অনেকগুলো সাফল্য। যেমন- ১. জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস, ২. অ্যাক্সিডেন্ট রির্সাস ইনস্টিটিউট, ৩. ট্রমা সেন্টার, ৪. চালকদের জন্য বিশ্রামাগার, ৫. চালকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, ৬. সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে টাস্কফোর্স গঠন, ৭. সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন, ৮. সড়ক পরিবহনখাতে শৃঙ্খলা জোরদার এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ১১১ দফা সুপারিশ প্রণয়নে ভূমিকা রাখা, ৯. হাইওয়ে পুলিশ, ১০. সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও ডিভাইডার চিহ্নিত, ১১. মহাসড়ক ৪-৬ লেনে উন্নীত করার দাবি, ১২. সার্ভিস রোড, ১৩ সড়ক পরিবহন আইন, ১৪. দক্ষ চালক তৈরি, ১৫ চালকদের প্রশিক্ষণে ইন্সট্রাক্টর তৈরি, ১৫ রোড সেফটি কোয়ালিশন গঠন, ১৭. সড়কে গতি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন, ১৯. সড়কে একমুখী গাড়ি চলাচল ব্যবস্থা, ১৯. শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ, ২০. পাঠ্যপুস্তকে সড়ক নিরাপত্তা, ২১ সমাজসেবায় একুশে পদক অর্জন, ২২ শিক্ষিত চালক তৈরির যৌক্তিকতা তুলে ধরা, ২৩. চালকদের কর্পোরেট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য।