দরিদ্র অসহায় মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষে ২০০৮ সালে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দুগাংগারপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প ফেইজ-২ নামের এই আবাসন প্রকল্প করা হয়। এখন নানাভাবে সমস্যার বেড়াজালে জর্জরিত হয়ে আছে আবাসন প্রকল্প ও তার বাসিন্দারা। সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার দুগাংগারপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প ফেইজ-২ নামের এই আবাসন প্রকল্পে সরকারী খাস জমিতে ৮০টি পরিবারের আবাসনের জন্য ৫ একর ১৮ শতাংশ জমিতে নির্মাণ করা হয় এই প্রকল্প। প্রতি ১০ টি পরিবারের জন্য একটি করে যৌথ টয়লেট ও টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। নির্মাণের প্রথম কয়েক বছর ভালোই ছিল। বর্তমানে বসবাস অযোগ্য হওয়ায় কয়েকটি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত টিনশেড ঘরের চাল জং ধরে ছিদ্র হয়ে পড়েছে। বেড়ার টিনও খসে পড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির মৌসুমে ঘরে পানি পড়ে। তখন কোন পরিবারই শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না। এখানে টয়লেটের অবস্থাও খুবই নাজুক। নষ্ট হয়ে গেছে সরকারীভাবে স্থাপনকৃত সবগুলো টিউবওয়েল। ব্যক্তিগত ভাবে স্থাপিত ৫ টি টিউবওয়েলের সাহায্যে তারা পানি ব্যবহার করছেন। এ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করে হস্তান্তরের পর কেউ আর দেখভাল করেনি বলে বাসিন্দারা জানান। তারা অবিলম্বে ঘর মেরামত বা নতুন ঘর নির্মাণ, বেদখলে থাকা প্রকল্পের নামে বরাদ্ধকৃত জমি দখলে দাবি জানান। আব্াসন প্রকল্পের নামে বরাদ্ধকৃত ৫ একর ১৮ শতক সিমানা নির্ধারনের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় কর্মকর্তার নিকট লিখিত দাবি জানান প্রকল্পের বাসিন্দ ও আশ্রয়ণ প্রকল্প ফেইজ-২ সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল কাদির। আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা ছফর আলী আক্ষেপ করে জানান, আমরা যখন প্রথম আশ্রয়নে ঘর পাই তখন এখানে জমি ছিল ৫ একরের উপরে। এখন চতুর দিকে স্থানিয় লোকজন জায়গা বেদখল করতে করতে এখন আড়াই একরের মত রয়েছে। আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা রোকেয়া বেগম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ঘরে থাকতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। সবগুলো ঘর পুরাতন হওয়ায় এর টিনের চাল ছিদ্র হয়ে মেঝেতে পানি পড়ে। আমরা প্রায় ৩/৪ বছর ধরে খুব কষ্টে বসবাস করে আসলেও কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয় না। আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা ষাট উর্দ্ধো লুৎফর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, টয়লেট নাই, খাওয়ার পানির কলও নাই, বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে। টিনের চালের উপর কাগজ বিছাইয়া থাকতে হয়। কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয় না। ঘরের পুরান টিন ভাইঙ্গা পড়তাছে, আমরা থাকব কেমনে। কোন্নগর দুগাংগারপার দুগাংগারপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প ফেইজ-২ সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল কাদির বলেন, আমরা এই আবাসনের ৮০টি পরিবারের লোকজন খুব কষ্টে আছি। আমাদের ঘর দরজা নষ্ট হয়ে গেছে। দিনদিন আমাদের জায়গা প্রতিবেশী লোকজন বেদখল করছে। কেউ কেউ পুকুর পাড়ের গাছ কেটে নিচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গায় আবার কেউ দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। আমাদের জায়গা সংকুচিত হওয়াতে আমরা ইতোমধ্যে সীমানা নির্ধারন করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনও করেছি। নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, আবাসন প্রকল্প ফেইজ- ২ এর যেসব ব্যারাক নষ্ট হয়ে গেছে। সেসব স্থানে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুইকক্ষ বিশিষ্ট পরিবেশ বান্ধব পাকাঘর নির্মাণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। খুব দ্রুত এ কার্যক্রম গ্রহন করা হবে। শেরপুর জেলার জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, আবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনিয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। সরকারী প্রকল্পের জমি বেদখলের সুযোগ নাই। অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।